এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল চাকরিহারা শিক্ষকদের সংগঠন ‘চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক মঞ্চ’। দুপুর ১২টায় জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল সল্টলেকের করুণাময়ীতে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সেখানে চাকরিহারাদের কারও দেখা মেলেনি। দুপুর ২টো নাগাদ মিছিল করে এসএসসি ভবনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) কয়েক জন সদস্য। মিছিল করে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাঁদের।
সোমবার সকালেই হুগলির আদিসপ্তগ্রাম থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক সুমন বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ। সুমনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পুলিশের একটি দল সুমনদের ব্যান্ডেলের বাড়িতে পৌঁছোয়। সে সময় সুমন সেখানে ছিলেন না। এর পর তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয় বলে অভিযোগ। তার কিছু ক্ষণ পরেই আদিসপ্তগ্রাম স্টেশন থেকে আটক করা হয় সুমনকে।
রবিবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে এসএসসি ভবন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার পরিকল্পনার একটি অডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছিল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট (অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। তাতে শোনা যাচ্ছিল, পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার পরিকল্পনা করছেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা! এমনকি আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেই ফোনালাপে। পুলিশের দাবি ছিল, এতে সুমন জড়িত। সেই সুমনকে সোমবার সকালে আটক করে মগরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নেতা আটক হওয়ায় আন্দোলন কতটা জোরদার হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। বাস্তবে নির্ধারিত কর্মসূচিতে কারও দেখা মিলল না।
তবে পূর্বঘোষণা না-থাকলেও হঠাৎই রাস্তায় নামেন এবিভিপি-র কয়েক জন কর্মী। বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে সল্টলেকের এসএসসি ভবনের দিকে এগোতে থাকেন তাঁরা। কিছুটা এগোনোর পরেই অবশ্য তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সুমনদের ডাকা কর্মসূচিতে কাকপক্ষীর দেখা না-পাওয়ার পরেই এবিভিপির ‘অনির্দিষ্ট’ কর্মসূচিকে ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এসএসসি ভবন অভিযানের অনুমতি চেয়ে পুলিশকে মেল করেছিলেন ‘চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক মঞ্চ’-এর সদস্য সুমন। কিন্তু পুলিশের তরফে অনুমতি দেওয়া হয়নি। রবিবার বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশ সরকার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “আমরা কিছু হিংসাত্মক পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছি। একটা ছ’মিনিটের অডিয়ো হাতে এসেছে। তাতে হিংসাত্মক কিছু করার কথা বলা হচ্ছে।’’ সাংবাদিক বৈঠকে ফোনালাপের অডিয়োর কিছু অংশ শুনিয়ে ডিসি বিধাননগর জানান, একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই তদন্ত এগোচ্ছে। ফোনে যে দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথনের অডিয়ো প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে, সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিতও করা গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পুলিশকর্তা।
রবিবারই পুলিশের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন চাকরিহারাদের সংগঠনের নেতা সুমন। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতেই এ ভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে। সুমন বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে যাতে এই আন্দোলনটাকে নষ্ট করে দেওয়া যায়। আমরা তো অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করছি। আমরা একেবারেই হিংসাত্মক আন্দোলনের পক্ষে নই। আর আমি এ সবের সঙ্গে মোটেই যুক্ত নই।’’
আটক হওয়ার পর সুমনের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তাঁর ভাই সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখন খবর পেলাম, দাদা আদিসপ্তগ্রাম স্টেশন থেকে আন্দোলনের জন্য যাচ্ছিলেন, তখন পুলিশ এসে তাঁকে ধরেছে। দাদাকে কোনও কথা বলতেও দেওয়া হয়নি। কোন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা-ও বলা হয়নি। ২০১৬ সালে চাকরি পাওয়া কি দাদার অপরাধ ছিল? আমরা কার কাছে যাব? সরকারি কর্মচারী হয়ে যদি সরকারের কাছেই এ ভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়, আমরা কোথায় যাব?’’