• ‘বিবেক অগ্নিহোত্রী আসলে বিবেকহীন মূর্খহোত্রী’, বাংলার ইতিহাস বিকৃত করায় তোপ ঋদ্ধি সেনের
    প্রতিদিন | ১৮ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোপাল মুখোপাধ‌্যায়, যিনি মুখে মুখে পরিচিত ‘গোপাল পাঁঠা’ নামে, বাংলার ইতিহাসের সেই খ্যাতনামা, দোর্দণ্ডপ্রতাপ চরিত্রকে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এ বিকৃত করে তুলে ধরা অভিযোগ উঠেছে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলে বউবাজার থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন ‘গ্রেটার ক‌্যালকাটা কিলিং’-এর বিশেষ চরিত্র গোপাল মুখোপাধ‌্যায়ের নাতি শান্তনু মুখোপাধ‌্যায়। বাংলায় ছাব্বিশের ভোটের আগে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিযোগও উঠেছে বিবেকের বিরুদ্ধে। বাংলা ও বাঙালিকে অপমানের অভিযোগে একজোট হয়ে মুখ খুলেছেন টলিপাড়ার তাবড় পরিচালক-প্রযোজকরা। এবার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ পরিচালককে একহাত নিলেন ঋদ্ধি সেন।

    ঋদ্ধি বরাবরই স্পষ্টবাদী। সামাজিক বা রাজনৈতিক ইস্যুতে বরাবর তাঁকে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে দেখা গিয়েছে। এবার সিনেমাকে হাতিয়ার করে হিন্দিভাষী পরিচালকের বাংলা ও বাঙালিকে অপমান এবং ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগেও চুপ থাকলেন না জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা। ব্যঙ্গাত্মকভাবেই ঋদ্ধির মন্তব্য, “আজকে ফেসবুক এবং হোয়াটস্যাপ ইতিহাসবিদদের জন্য একটি দুঃখের দিন।” কেন? এপ্রসঙ্গে তিনি গোপাল মুখোপাধ্যায়ের উত্তরসূরীর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রথমত, দাদুর চরিত্র সিনেমায় রাখা হবে বলে আমাদের কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। উলটে ট্রেলারে বা সিনেমার গল্পে তাঁকে ‘এক থা কষাই গোপাল পাঁঠা’ বলে পরিচয় করানো হচ্ছে। সিনেমা তৈরির আগে বিবেক অগ্নিহোত্রীর উচিত ছিল, ভালো করে গবেষণা করা। এহেন ভুয়ো তথ্য কোথা থেকে জোগাড় করেছেন তিনি?” এই ‘ধৃষ্টতা’র জন‌্য পরিচালককে ক্ষমা চাইতে বলে আইনি নোটিসও পাঠিয়েছেন গোপাল মুখোপাধ‌্যায়ের নাতি শান্তনু মুখোপাধ‌্যায়। সেকথা মনে করিয়েই পরিচালককে তোপ দেগে ঋদ্ধির বিদ্রুপ, “এই জন্যই কখনও কিছু নিষিদ্ধ করা উচিত না। সত্যি চাপা থাকে না। বরং জনসমক্ষে সেই সত্য উদঘাটন হওয়া প্রয়োজন। ট্রেলারটা মুক্তি না পেলে কেউ জানতেই পারত না যে, বিবেক অগ্নিহোত্রী আসলে বিবেকহীন মূর্খহোত্রী।”

    প্রসঙ্গত, ‘ছেচল্লিশের দাঙ্গা’ বলে কুখ‌্যাত যে ‘গ্রেটার ক‌্যালকাটা কিলিং’, সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে শান্তনুর বক্তব‌্য, “অনুশীলন সমিতির কাজে যুক্ত থাকার পাশাপাশি দাদু দুটো পাঁঠার মাংসের দোকান চালাতেন। কুস্তিগির ছিলেন, বুকের পাটা ছিল ঈর্ষণীয়। হিন্দিভাষীদের মুখে মুখে সেই বুকের পাটা হয় ‘পাট্টা’। শেষে তাঁর পেশা আর নেশা মিলিয়ে অপভ্রংশে নাম হয়ে যায় গোপাল পাঁঠা। কিন্তু দাদু আমার কষাই চরিত্র ছিলেন না, ভিলেনও ছিলেন না। ছিলেন সিংহহৃদয়। ১৯৪৬-এ মুসলিম লিগের দাঙ্গা প্রতিরোধে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে আতঙ্কিত মানুষের স্বার্থে যিনি অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। বাঁচিয়েছিলেন এই বাংলা ও বাঙালিকে। তাঁর চরিত্রকে বিকৃত করে দেখিয়েছেন বিবেক।”

    স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া শেষ সংগ্রামে যে গোপাল অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন দেশের মানচিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখতে। শান্তনু বলছেন, ছেচল্লিশের সেই দাঙ্গার আগে কলকাতার নানা জায়গায় লিগ ভলান্টিয়াররা জড়ো হচ্ছিলেন। ১৬ আগস্ট শহিদ মিনারে তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি ও মুসলিম লিগের নেতৃত্বে জনসভা হয়। সুরাবর্দি খাঁ সাহেবের সঙ্গে শোনা যায় সেখানে প্রাক্তন মুখ‌্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও ছিলেন। দাবি ওঠে আগে লিগকে তাদের পাকিস্তান বুঝিয়ে দিতে হবে, তার পর ভারতবর্ষ স্বাধীন হবে। কিন্তু লিগ ভলান্টিয়ারদের সশস্ত্র অবস্থায় দেখে জ্যোতিবাবু সভা ছেড়ে চলে যান। সভা শেষে ধর্মতলা চত্বরে যত অস্ত্রের দোকান ছিল সব লুঠপাট শুরু হয়। চলে খুন-রাহাজানি। দাঙ্গাকারীদের ‘অ‌্যাকশন’ ছড়িয়ে পড়ে নারকেলডাঙা, কলুটোলায়। যে দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে নিজের অনুগামীদের সংঘবদ্ধ করে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন গোপাল। অগ্নিমন্ত্র দিয়ে বলেছিলেন, ‘লিগ দাঙ্গাকারীরা একজনকে মারলে, ১০ জনকে মারবে। কিন্তু নিরীহ কোনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা মহিলা মুসলিমদের কেশ স্পর্শ করা যাবে না।’ সেই ঘটনা নিয়ে গোপালবাবুর পরিচয় বিকৃত করার অভিযোগ তুলেই সরব পরিবার।
  • Link to this news (প্রতিদিন)