নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর ও কলকাতা: সবজি থেকে মুদিখানা—মূল্যবৃদ্ধির ঠেলায় মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই তালিকায় নতুন সংযোজন বাঙালির প্রিয় গোবিন্দভোগ চালের। গত একমাসে দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়ে তা মহার্ঘ তালিকায় ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এই চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। সামনেই কড়া নাড়ছে দুর্গাপুজো। সেইসময় এই দাম কোথাও পৌঁছবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন সবাই। তাই অষ্টমীর খিচুড়িতে আদৌ কি গোবিন্দভোগ থাকবে, নাকি পাহাড়িয়া আতপ মিশিয়ে চলবে নিয়মরক্ষা? অনেক নামী ক্যাটারার সংস্থাও এনিয়ে সংশয়ে।
বাংলার মঠ-মন্দিরে ঠাকুরের নিত্যভোগ এবং সাধু-সন্ন্যাসীদের দৈনন্দিন খাবার রান্না হয় গোবিন্দভোগ চালে। অনেক গৃহস্থ বাড়িতেও বিশেষ রান্নায় এই চাল ব্যবহার করা হয়। পায়েস, পোলাও থেকে খিচুড়ি—সবকিছুরই স্বাদ গোবিন্দভোগে অন্যরকম হয়ে যায়। গোবিন্দভোগের গন্ধে মোহিত হন আট থেকে আশি সকলেই। গত মে মাস পর্যন্ত গোবিন্দভোগ চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। দামটা অল্প বিস্তর বাড়তে শুরু করে জুন মাস থেকে। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি আচমকাই তার দর আকাশ ছুঁয়েছে। বর্তমানে এলাকাভিত্তিক ও চালের গুণমান অনুযায়ী ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে! ফলে বহু জায়গায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল গোবিন্দভোগের সঙ্গে পাহাড়িয়া আতপ মিশিয়ে দিচ্ছে। এই চালটি আকারে গোবিন্দভোগের থেকে সামান্য বড়। খালি চোখে তফাত বোঝা কঠিন। এই চালের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
কেন বাড়ছে দাম? রাইস মিল সূত্রের খবর, গোবিন্দভোগ চালের চাষ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হলেও বেশি চাষ হয় বর্ধমানের রায়না ও খণ্ডঘোষ এলাকায়। ওই এলাকার বহু রাইস মিল শীতকালে ধান কাটার পর সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা দরে ৬০ কেজির একবস্তা ধান কিনেছে। এরপর তা স্টক করে রেখেছে। গতবছর ধানের ফলন কম হয়েছিল। বাজারের চাহিদা ও জোগানের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা ওয়াকিবহাল। তার উপর মধ্যপ্রাচ্যে এবার চাহিদা বেশি। তাই হুহু করে বাড়ানো হচ্ছে দাম।
খড়দহের সুখচরের বাসিন্দা দিব্যেন্দু চৌধুরী বলেন, সবজি, চাল, তেল ও মশলার দাম আকাশ ছোঁয়া। তার মধ্যে গোবিন্দভোগ সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। হোটেল রেস্তোরাঁও পোলাওয়ের দাম বাড়িয়েছে।
দমদমের এক নামী ক্যাটারিং সংস্থার কর্ণধার অমিত দাস বলেন, ৮০ টাকা কেজির গোবিন্দভোগ ২০০ টাকা কেজি হলে প্লেট প্রতি দাম বাড়বেই। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে অনেকেই গুণমানে আপস করছে। তাই কম টাকায় কাজ ধরে পাহাড়িয়া আতপ দিয়েই কাজ সারছে অনেকে। হোটেল, রেস্তরাঁর ক্ষেত্রেও একই বিষয়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইস মিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, গতবছর গোবিন্দভোগের কম উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এজন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। দাম পুজোর সময় আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।