১০০ দিনের কাজ চালু নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ, সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র
হিন্দুস্তান টাইমস | ১৮ আগস্ট ২০২৫
১০০ দিনের কাজ চালুর হাইকোর্টের নির্দেশ ঘিরে ফের আইনি জট। কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল কেন্দ্র। গত ১ অগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প যা ‘১০০ দিনের কাজ’ নামে পরিচিত, চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই কেন্দ্রীয় সরকার এখন শীর্ষ আদালতের দারস্ত হয়েছে। মামলাটি এই সপ্তাহেই শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজ্যে প্রায় তিন বছর ধরে এই প্রকল্প বন্ধ। এর ফলে লাখ লাখ গ্রামীণ শ্রমিক মজুরি থেকে বঞ্চিত। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বারবার অভিযোগ তুলেছে, কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা আটকে রেখেছে। অন্যদিকে নয়া দিল্লির যুক্তি, প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ধরা পড়েছে। আসল শ্রমিকরা বাদ গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের নামে টাকা তোলা হয়েছে, নকল বাঁধ তৈরি করে ভুয়ো বিল দেখানো হয়েছে, এমনকি প্রকৃত জব কার্ডধারীরাও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই টাকা রিলিজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
২০২২ সালের আগের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই একাধিকবার আদালতে শুনানি হয়েছে। চলতি বছরের জুনে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছিল, দুর্নীতি রুখতে প্রয়োজনে কড়া শর্ত চাপিয়ে দিতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু গোটা প্রকল্প একেবারে বন্ধ করে রাখা যাবে না। দরিদ্র শ্রমিকদের প্রাপ্য কাজ ও মজুরি থেকে বঞ্চিত করা জনস্বার্থবিরোধী। এমনকি বেঞ্চ প্রস্তাব দেয়, যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকট, যেমন হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদা ও দার্জিলিং সেই জেলাগুলি বাদ দিয়ে অন্তত বাকি জেলাগুলিতে প্রকল্প চালু হোক।
কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো দল ২০২৪ সালে তদন্ত করে দাবি করেছিল, পশ্চিমবঙ্গে ৬১৩ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে। তার মধ্যে রাজ্য সরকার মাত্র ২১০ লক্ষ টাকার মতো উদ্ধার করতে পেরেছে। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি, রাজ্য প্রতিনিধি, ক্যাগ ও অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের সদস্য মিলিয়ে চার সদস্যের একটি যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ২০২৫ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়ে জানায়, দুর্নীতির চার জেলা থেকে অন্তত ২৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। তবুও রাজ্যের অধিকাংশ অংশে প্রকল্প কেন বন্ধ থাকবে, সেই প্রশ্ন তোলে আদালত।
অন্যদিকে, খেতমজুর সংগঠন এবং বিরোধী নেতারা হাইকোর্টে পৃথক মামলা দায়ের করেছিলেন। খেতমজুর সমিতির দাবি ছিল, ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে মজুরি বন্ধ, তাই অবিলম্বে সব বকেয়া পরিশোধ করা হোক। এমনকি দেরির জন্য সুদ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার সিবিআই তদন্তের আবেদন জানান, যাতে দুর্নীতি কোথায় হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র স্পষ্ট হয়। এই অবস্থায় হাইকোর্ট প্রকল্প চালুর নির্দেশ দিলেও কেন্দ্র তা মানতে নারাজ। শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যুক্তি রাখা হবে যে, দুর্নীতি ও অনিয়মের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টাকাপয়সা ছাড়া উচিত নয়। অন্যদিকে রাজ্য সরকার ও শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কেন্দ্র দরিদ্র শ্রমিকদের ক্ষতি করছে।