ভিন রাজ্যে হেনস্থার শিকার, বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে 'শ্রমশ্রী' প্রকল্পের ঘোষণা মমতার...
আজকাল | ১৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিন রাজ্যে ক্রমাগত হেনস্থার শিকার বাংলাভাষীরা, গত কয়েকদিনে বারে বারে সোচ্চার হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। জুলাইয়ের শেষে 'বাঙালি হেনস্থা' রুখতে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ১৮ আগস্ট, সোমবার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য নয়া প্রকল্পের ঘোষণা করলেন তিনি। এদিন মমতা জানান, রাজ্য সরকার চালু করতে চলেছে নয়া প্রকল্প 'শ্রমশ্রী।' এই প্রকল্পের আওতায় কারা, কীভাবে, কী কী সুযোগ সুবিধা পাবেন, তাও বিস্তারিতভাবে জানান তিনি।
জুলাই মাস থেকেই, ক্রমাগত মমতা, বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। গত একমাসে বারে বারে দেশের নানা রাজ্যে বাঙালিদের উপর আক্রমণের বীভৎস ঘটনা সামনে এসেছে। রাজ্য আলাদা আলাদা, ঘটনা এক। বাংলার কথা বলা এবং তারপরেই বাংলাদেশি সন্দেহ। উপযুক্ত কাগজ, নথি দেখালেও ছাড় নেই। তুলে নিয়ে গিয়ে চরম হেনস্থা।
মমতা বারে বারে জানিয়েছেন, কোনও পরিস্থিতিতে এই ঘটনা বরদাস্ত নয়। ২৮ জুলাই ভিন রাজ্যে একের পর এক বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বন্ধ করতে এবার তাঁদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
৩১ জুলাই মমতা বলেন, ‘পুজো সবার জন্যই ভাল হয়ে উঠুক, আনন্দে মেতে উঠুন সকলে, দেখলেন সবাই আজকে বাংলায় কত সুন্দর সুন্দর কথা বললেন। যাঁরা অত্যাচারিত হচ্ছেন, নীপিড়িত হচ্ছেন, জেলায় ফিরে আসছেন, দরকার হলে ক্লাবের পক্ষ থেকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁদের নতুন জামাকাপড় দেবেন। কারণ, তাঁদের সব কেড়ে নিচ্ছে এবং খুবই অত্যাচারিত হয়ে ফিরে আসছে।‘
মূলত, গত এক মাসে তিনি সবসময় বুঝিয়েছেন, সব পরিস্থিতিতেই, তিনি পরিযায়ী শ্রমিক, বাংলাভাষীদের উপর ঘটে চলা হেনস্থা নিয়ে চিন্তিত। সোমবার নবান্নতে সাংবাদিক সম্মেলনে 'শ্রমশ্রী' প্রকল্পের কথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, 'বিভিন্ন রাজ্যে, যেখানে ডবল ইঞ্জিন সরকার আছে, সেখানে বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়ের উপর পরিকল্পতভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে তাঁকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।' মমতা বলেন, 'বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক, যাঁরা বাংলার বাইরে কাজ করছেন, তাঁদের ফিরিয়ে এনে, যাঁরা আসতে পারবেন, আসতে চান, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। এই পরিকল্পনার নাম দিয়েছি শ্রমশ্রী।'
কারা পাবেন এই প্রকল্পের সুবিধা?
এদিন মমতা জানান, 'বাংলায় যে ২২ লক্ষ ৪০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং বিদেশে কাজ করছে, যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছেন, তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। যাঁরা নাম নথিভুক্ত করেননি, তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।' স্পষ্ট করে জানান, বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক, যাঁরা অন্য রাজ্যে কাজ করছেন, তাঁরাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
কীভাবে এই নয়া প্রকল্পের সাহায্য পাওয়া যাবে? কেন এই প্রকল্প?
সব বিস্তারিত জানান মমতা। এদিন তিনি বলেন, 'এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফিরিয়ে আনা এবং তাঁদের জীবিকার জন্য, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য করা। যাঁরা ফিরে আসবেন, এককালীন ভ্রমণ সহায়তা-সহ আমরা পাঁচ হাজার টাকা দেব। ফিরে আসার পর, বারো মাস, অর্থাৎ এক বছর, নতুন কাজে ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।' এই বিষয়ে দেখভাল করবে শ্রমদপ্তর। ফিরে আসা শ্রমিকদের দক্ষতা যাচাই করে, প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিয়ে নানা কাজে যুক্ত করা হবে। কর্মশ্রী প্রকল্পেও আওতায় এই শ্রমিকদের জব-কার্ড দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন মমতা। পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্যসাথী কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হবে এবং বছরের মাঝে ফিরে আসার কারণে, শ্রমিকদের সন্তানদের স্থানীয় স্কুলে ভর্তির কথা বলেন মমতা।