• পরিযায়ী শ্রমিকদের এককালীন খরচ সহ মাসিক ভাতার পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ আগস্ট ২০২৫
  • সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। বাংলায় ফিরলেই এককালীন পাঁচ হাজার টাকা পাবেন। সেই সঙ্গে যতদিন না তাঁরা নতুন করে কাজ পাচ্ছেন, ততদিন তাঁদের মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।
    এর দায়িত্বে থাকবে শ্রম দপ্তর।

    মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অন্য রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকরা শুধু বাংলায় কথা বলার অপরাধে নির্যাতন ও অপমানের শিকার হচ্ছেন। তাই তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য এই ‘শ্রমশ্রী প্রকল্প’ শুরু করা হয়েছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, কোভিডের সময়ও সরকার তাঁদের সহায়তা করেছিল, এবার তাঁদের লক্ষ্য, কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা।

    ফিরে আসা শ্রমিকদের দক্ষতা যাচাই করে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁদের জব কার্ড, খাদ্যসাথী কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী সুবিধা, শিক্ষা সহায়তা, কন্যাশ্রী ও শিক্ষাশ্রীর সুবিধা দেওয়া হবে। বাড়ি না থাকলে কমিউনিটি কোচিং সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা ও সন্তানদের স্কুলে ভর্তির সুবিধাও থাকবে।

    মমতা জানান, বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক রাজ্যে ফিরেছেন এবং শ্রমশ্রী পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করলে তাঁরা আই-কার্ড পাবেন। এর ফলে তাঁরা রাজ্যের সমস্ত সরকারি সুবিধা নিতে পারবেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ২,৭০০ পরিবার অত্যাচারিত হয়ে ফিরে এসেছে। ক্যাবিনেট বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।

    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাইরের রাজ্যের মানুষকে সম্মানের সঙ্গে রাখি, কিন্তু আমাদের শ্রমিকরা বাইরে হেনস্থা হচ্ছেন। সম্প্রতি অন্ধ্রে এক শ্রমিককে খুন করে মৃতদেহও ফিরতে দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শ্রমশ্রী প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারেন।’

    প্রসঙ্গত, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে একের পর এক তুঘলকি পদক্ষেপে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা যথেষ্ট আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত কয়েক দশকে এমন দুর্দিন দেখতে হয়নি রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষদের। কিন্তু, সম্প্রতি ‘ডবল ইঞ্জিন’ পরিচালিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বার বার হেনস্থা করা হচ্ছে। সেখানে বাংলা ভাষা ব্যবহার করলেই ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে এই অত্যাচারের শুরু হচ্ছে। আর বিএসএফ-এর হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করার মাধ্যমে চরম বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে সেখানকার পুলিশ-প্রশাসন। এইসব রাজ্যের পুলিশ ভয় দেখিয়ে তাঁদের টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে বলেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

    রাজধানী দিল্লি, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ থেকে শুরু করে বিজেপি শাসিত প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই এই বাঙালি হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। বাংলার দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া মালদহের মতো একাধিক জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা এই অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। নিয়েছেন একাধিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ। এমনকি যাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদেরকেও উদ্ধার করে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    এ ব্যাপারে তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তিনি এই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আইনি তাঁদের সহযোগিতারও হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজ্যে বিপদগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্ধারে এগিয়ে গিয়েছেন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনেও সামিল হয়েছেন।

    এদিকে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর যখন এই হেনস্থা চলছে, তখন তৃণমূলের সাংসদরা দিল্লির বাঙালি পাড়ায় গিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করে এসেছেন। এমনকি সংসদ চত্বরেও তাঁরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।

    এমতাবস্থায় দেশজুড়ে যখন এই অরাজকতা চলছে, তখন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক বিষয়টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তাঁদের সাহায্যে ‘শ্রমশ্রী’ নামক প্রকল্পটি চালুর পরিকল্পনা করেছেন। আর্থিক সাহায্যের জন্য দিয়েছেন একটি নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)