স্বামীর রোজগারের টাকা দিন, সংশোধনাগারে মৃত বন্দির স্ত্রী দ্বারস্থ হলেন কলকাতা হাই কোর্টের
আনন্দবাজার | ১৯ আগস্ট ২০২৫
প্রায় ১৩ বছর আগে খুনের দায়ে সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই থেকে তাঁর ঠিকানা দমদম সংশোধনাগার। সেখানে দীর্ঘ বছর কাজ করেন তিনি। কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিকও পেতেন। ২০২৩ সালে সংশোধনাগারে আচমকা মৃত্যু হয় তাঁর। এ বার জেলে থাকাকালীন তাঁর স্বামীর রোজগারের টাকা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন মৃতের স্ত্রী।
মৃত স্বামী লাল্টু ঘোষের স্ত্রী মথুরা ঘোষ সোমবার আদালতে জানান, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁর স্বামী জেল খেটেছেন। জেলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে বাড়ির একটি অনুষ্ঠানে প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। দিন কয়েক কাটিয়ে জেলে ফেরার পরের দিনেই মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী লাল্টুর। এর পরেই তাঁর স্ত্রী জানান, জেলে থাকাকালীন লাল্টু সেখানে কাজ করতেন। সেই কাজের পারিশ্রমিক সংশোধনাগারে জমা আছে। তাঁদের সেটা দিতে হবে। তাঁর মৃত স্বামীর জেলে উপার্জনের কয়েক লক্ষ টাকা দেওয়ার আর্জি মঞ্জুর করল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশ, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষকে ওই স্ত্রীকে স্বামীর উপার্জনের টাকা দিতে হবে। দমদম সংশোধনাগারকে ওই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার ওই মামলার শুনানিতে স্ত্রীর আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং দিবাকর সর্দার জানান, মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া গিয়েছে।
স্ত্রীর বক্তব্য, “স্বামীর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল, অর্থাৎ ১৩ বছর তাঁর স্বামী জেলে কাজ করেছেন, শ্রম দিয়েছেন। এর জন্য প্রতি দিন মজুরি দেওয়া হয়। স্বামী জেলে মারা গিয়েছেন তাই এখন তাঁর মজুরির টাকা দেওয়া হোক। এটা পাওয়া তাঁর অধিকার।”
বিচারপতি সিংহ জানতে চান, তাঁর স্বামী জেলে কত টাকা রোজগার করেছেন, উত্তরে স্ত্রীর আইনজীবী জানান, সেই হিসাব জেল কর্তৃপক্ষ দিতে পারবেন। তবে অনুমান করা হচ্ছে কমপক্ষে ৮-১০ লক্ষ টাকা হবে। এর পরেই হাই কোর্ট জানায়, জেল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই আবেদন করতে হবে স্ত্রীকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে নদিয়ার একটি খুনের মামলা দায়ের হয় লাল্টু ঘোষের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। বাড়ির একটি অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। দিন কয়েক কাটিয়ে জেলে ফেরার পরের দিনেই মৃত্যু হয় লাল্টুর। স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করেন স্ত্রী। পরে স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্র চান তিনি। জেল কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রী হাই কোর্টে মামলা করেন। আদালত স্ত্রী মথুরা ঘোষকে স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে নির্দেশ দেয়।