• নিজভূমে পরবাসে! প্রিয় বিশ্বভারতীতেই এবার ব্রাত্য 'অমর্ত্য' বক্তৃতা...
    ২৪ ঘন্টা | ১৯ আগস্ট ২০২৫
  • প্রসেনজিত্‍ মালাকার: বারংবার বিতর্কের কেন্দ্রে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva-Bharati)। আবারও শিরোনামে রবীন্দ্রনাথের এই স্বপ্নের শিক্ষানিকেতন —তবে এবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) উপর একটি বক্তৃতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনুমতি না দেওয়ার কারণে।

    একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই বক্তৃতাটি একটি বাংলা পত্রিকা 'অনুষ্টুপ' (Anushtup) আয়োজন করেছিল এবং ১৪ই আগস্ট হওয়ার কথা ছিল। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ জ্যাঁ দ্রেজের এই বক্তৃতাটি দেওয়ার কথা ছিল।

    বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের শান্তিদেব সভাকক্ষে গত ১৪ তারিখ সন্ধ্যায় অমর্ত্য সেন বিষয়ক বিশেষ সংখ্যার উদ্বোধন উপলক্ষে বক্তৃতা সভার আয়োজন করে একটি প্রকাশনা সংস্থা। অনুষ্ঠানের সভামুখ্য ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ। তিনি 'লার্নিং ফ্রম অমর্ত্য সেন' (Learning from Amartya Sen) শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন।

    মূলত অনুষ্ঠানটি আয়োজনের কথা ছিল বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সভাকক্ষে। তবে শেষ মুহূর্তে স্থান বদল করে তা বোলপুরে অনুষ্ঠিত হয়। এই ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হলে প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক অনিল আচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ না হওয়ায় অনুষ্ঠানস্থল পরিবর্তন করতে হয়েছে।

    এই ম্যাগাজিনটি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগ এবং এ.কে. দাশগুপ্ত সেন্টার ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর সহযোগিতায় সেনকে নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল।বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না দেওয়ার পর, নির্ধারিত তারিখেই একটি ব্যক্তিগত জায়গায় বক্তৃতাটি অনুষ্ঠিত হয়।

    জ্যাঁ দ্রেজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতন এবং ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল পণ্ডিত। সেই উদার ও বিশ্বজনীন পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন। অথচ তাঁর বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ সেই স্থানে না পাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যতীত গণতন্ত্র অচল—এই বার্তাও তিনি জোর দিয়ে তুলে ধরেন। তাঁর কাজকে উদযাপনের জন্য একটি অনুষ্ঠান বিশ্বভারতীর লাইব্রেরি থেকে বোলপুরের একটি স্থানীয় হলে সরিয়ে নিতে বাধ্য হওয়াটা আশ্চর্যজনক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে তাহলে এটাই!'

    যদিও বিশ্বভারতীর জনসংযোগ অধিকর্তা অতীগ ঘোষ বলেছেন যে এই বক্তৃতাটি বাতিল করা হয়েছিল কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের সঙ্গে একই তারিখে মিলে যাচ্ছিল, তবে বিশ্বভারতীর অধ্যাপকরা বলেছেন যে এমন কোনও মিল ছিল না।

    জনসংযোগ বিভাগ আরও জানিয়েছে যে, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান চলাকালীন কাউকে একই সময়ে কোনও অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয় না। এই ক্ষেত্রে, লিপিকা সভাঘরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রবীন্দ্র সপ্তাহ বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এবং এর সঙ্গে কোনও অন্য অনুষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া যায় না।'

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'মিলনায়তনের অনুমতি না দেওয়ার আসল কারণ হল- অমর্ত্য সেন এবং জ্যাঁ দ্রেজ দুজনেই কেন্দ্রে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকারের চক্ষুশূল।'

    দ্রেজের বক্তৃতার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ.কে. দাশগুপ্ত সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অপূর্ব কুমার চট্টোপাধ্যায়কে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে, যিনি এই বক্তৃতার আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন।

    ২০২৩ সালে, বিশ্ববিদ্যালয় অমর্ত্য সেনকে একাধিক নোটিশ পাঠিয়েছিল, তাঁর বাসভবনের জমিটির একটি অংশ ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছিল, যা বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেছিল যে তিনি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালে  ক্যাম্পাসের মধ্যে অবৈধ প্লট অধিগ্রহণকারীদের একটি তালিকায় অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের নামও অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

    কিন্তু অমর্ত্য সেন স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে জমিটি তার পরিবারকে ১৯৪০-এর দশকে ১০০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁর স্বর্গত পিতৃদেব জমির নিয়ম-কানুন মেনেই তা কিনেছিলেন।

     

     

     

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)