বিধান সরকার: সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে মৃত নার্সের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এল। আর তাতেই সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে নার্সের মৃত্যুরহস্যের উপর থেকে অনেকখানি পর্দা উঠল। কীভাবে মৃত্যু ওই নার্সের? ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।
নার্সের রহস্যমৃত্যু!
কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র ৩ দিনের মাথাতেই নার্সিংহোমের ৪ তলার ঘর থেকে উদ্ধার হয় নার্স দিপালী জানার ঝুলন্ত দেহ। নন্দীগ্রামের মেয়ে দিপালী জানা বেঙ্গালুরুর জেএনএম কলেজ থেকে নার্সিং পাস করেছিলেন গত বছর। তারপর এক বন্ধুর মাধ্যমে সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে যোগ দেন ঘটনার ৩ দিন আগে। নার্সিংহোমে নার্স দিপালী জানার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। পরিবার অভিযোগ করে খুনের।
প্রেমিক-মালিক গ্রেফতার!
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস নার্স দিপালী জানার প্রেমিক ও ওই নার্সিংহোম মালিককে গ্রেফতার করে। ১৬ অগাস্ট কল্যাণী এইমসে ময়নাতদন্ত করা হয় ওই নার্সের। মৃতের পরিবারের দাবি মেনেই কল্যাণী এইমসে হয় ময়নাতদন্ত। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ৪ জন সিনিয়র ফরেনসিক ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেন। ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয় গোটা প্রক্রিয়ার। এবার সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট-ই হাতে এসেছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট...
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্য়ুর কারণ হিসেবে স্পষ্ট উল্লেখ, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা! পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে "Antemortem Hanging" শব্দটি উল্লেখ করা রয়েছে। বলা হয়েছে, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই নার্সের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা, "the cause of death is asphyxia arising as a complication of antemortem hanging." বাংলায় তর্জমা করলে যার মানে দাঁড়ায়, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ার কারণেই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু। পাশাপাশি, এও বলা হয়েছে যে, মৃত নার্সের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই বা শারীরিক নির্যাতনের কোনও চিহ্ন ছিল না।
প্রেমিকের ফোন...
সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই ওই নার্স আত্মঘাতী হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করে পুলিস। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার যুবক রাধাগোবিন্দর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল নার্স দিপালীর। ঘটনার দুদিন আগে অর্থাৎ ১০ আগস্ট তাঁরা ডানকুনির একটি হোটেলে রাত কাটিয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দীপালি বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে নানা অছিলায় সেই প্রস্তাব এড়িয়ে যান রাধাগোবিন্দ। তা থেকেই সম্ভবত মানসিক টানাপোড়েনের শুরু। এখন ধৃত প্রেমিক রাধাগোবিন্দের মোবাইল ফোনের খোঁজ চালাচ্ছে সিঙ্গুর থানার পুলিস। প্রেমিক রাধাগোবিন্দের ফোন পাওয়া গেলেই নার্সের আত্মহত্যার পিছনে আরও তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করছে পুলিস।