প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মঙ্গলবার সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, এই রায় পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন নেই। রাজ্যের তরফে যত পুনর্বিবেচনার আর্জি দায়ের করা হয়েছিল, সেই সবগুলিই খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরিতে ফের বহাল হওয়ার রাস্তা প্রায় বন্ধ, দাবি করছে অভিজ্ঞ মহল। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিলের রায়ে যে বক্তব্য ছিল, তা পুনরায় উল্লেখ করে বিচারপতিরা জানান, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তা বাতিল করাই ন্যায্য সিদ্ধান্ত।
বিচারপতিরা জানান, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBSSC) এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে মামলার জবাবে নিজেদের ভুল কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিল। সিবিআই এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রনজিৎ বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখিত অসংখ্য অনিয়মেও এই নিয়োগের স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। মূল ওএমআর শিট বা তার প্রতিলিপি না রেখে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’-র পরিচয় দিয়েছে এবং তা গোটা ব্যবস্থাকেই কলুষিত করেছে বলে পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতের কড়া সমালোচনাও বহাল রাখে শীর্ষ আদালত।
উল্লেখ্য, নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ২০১৬ সালের এসএসসির গোটা নিয়োগ প্যানেল বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। ফলে চাকরিহারা হয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।
এর পরেই তোলপাড় পড়েছিল রাজ্যজুড়ে। চাকরিহারাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম ‘টেন্টেড’ বা ‘দাগি’ বলে উল্লেখ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। নতুন নিয়োগের জন্য বেঁধে দেওয়া হয় ডেডলাইনও। সেই অনুযায়ী এই শূন্যপদগুলিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছেই। পাশাপাশি চাকরিহারা শিক্ষক, যাঁরা টেন্টেড নন, তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়াতে পারবেন, রাজ্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরই মধ্যে চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। ফলে আশা ছিল ওই চাকরিহারাদের মনে।
কিন্তু এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে মামলাটির ফের শুনানির দাবি মেনে নেওয়া যায় না। ফলে আগের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত সময় রায়ই বহাল থাকল।
(তথ্য সহায়তা: অমিত চক্রবর্তী, অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়)