• নাসার ‘ধ্রুবতারা’ বাংলার গৌতম চট্টোপাধ্যায়
    আজকাল | ২০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পথ দেখিয়েছেন তিনি। করেছেন অন্যান্য বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত। নাসায় কর্মরত এবার সেই ভারতীয় বিজ্ঞানী পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ডঃ গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করতে চলেছে নাসা। তাঁকে দেওয়া হবে 'নর্থস্টার' পুরস্কার। গৌতম-সহ এই আরও তিন বিজ্ঞানীকে এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবে নাসা। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) তরফে এই পুরষ্কার হল তাদের দেওয়া  সর্বোচ্চ সম্মান। গৌতম নিজে এই ল্যাবরেটরিতে কর্মরত। 

    নর্থ স্টার শব্দটির বাংলা অর্থ হল উত্তরের তারা বা ধ্রুবতারা। যার সাহায্যে দিক চিহ্নিত করা যায়। এককথায় এই তারাটিকে দিক নির্ণয়কারী তারা হিসেবেও বলা হয়। নাসা যে কারণে তাদের এই পুরস্কারের নামকরণ করেছে তার পিছনে যুক্তি হল এরা এঁদের কাজের মাধ্যমে বাকিদের পথ দেখিয়েছেন। জানা গিয়েছে চারটি বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তার মধ্যে একটি হল নতুন কিছু আবিষ্কার বা উদ্ভাবন। দ্বিতীয়টি হল নিজের কাজের মাধ্যমে বাকিদের পথ দেখানো বা উজ্জীবিত করে তাঁদের কাজের বিষয়ে আরও বেশি উৎসাহী করে তোলা। তৃতীয় বিষয়টি হল 'অ্যাডভান্সমেন্ট'। যেখানে আবিস্কৃত কোনো কিছুকে এক 'জেনারেশন' থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এ নিয়ে যাওয়া। চতুর্থ বিষয়টি হল 'থ্রাইভ'। অর্থাৎ একটা কিছু আছে যেটাকে নিজের মতো করে নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করা। গৌতম পেয়েছেন নিজের কাজের মাধ্যমে অন্যকে উজ্জীবিত করার জন্য পুরস্কার। জানা গিয়েছে, পুরস্কার হিসেবে নাসা অর্থ ছাড়াও দেবে একটি শংসাপত্র। প্রতি বছরই তাদের তরফে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। 

    হুগলি জেলার কোন্নগর নবগ্রামের বাসিন্দা গৌতম গত ২৫ বছর ধরে নাসায় বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি 'টাটা ইন্সটিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ' বা টিআইএফআর-এ কর্মরত ছিলেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২৪টি আবিস্কারের পেটেন্ট।বেতার বা ওয়ারলেস কমিউনিকেশন-এর 6G নিয়ে এই মুহূর্তে তিনি কাজ করছেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন গ্রহ সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য তৈরি করছেন যন্ত্রপাতি। তবে গৌতম কিন্তু উঠে এসেছেন একেবারেই সাধারণ ঘর থেকে। হ্যারিকেনের আলোতে স্কুল জীবনে লেখাপড়া করেছেন। কোন্নগর নবগ্রামের নবগ্রাম বিদ্যাপীঠ স্কুলের ছাত্র। নাসায় কর্মরত থাকলেও তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'র একজন ভিজিটিং প্রফেসর। এই পুরস্কার পাওয়ার আগে তাঁর ঝুলিতে উঠেছে একাধিক পুরস্কার। পেয়েছেন নাসা-জেপিএল ২০২৩ পিপল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড। নাসার একাধিক মিশন যেমন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, প্ল্যানেটরি সায়েন্স এবং আর্থ অবজার্ভেশন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।

    গত বছর নভেম্বর মাসে রেডিও এবং ওয়্যারলেস বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য বিজ্ঞানের জগতে অন্যতম সেরা পুরষ্কার 'আর্মস্ট্রং মেডেল' পেয়েছেন গৌতম। ২৩ নভেম্বর নিউইয়র্কে এক বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ছিলেন ১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডঃ রবার্ট উড্রো উইলসন ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা।  রেডিও ও ওয়্যারলেস বিজ্ঞান ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজে উৎসাহিত করে তুলতে আমেরিকায় ১৯০৯ সালে তৈরি হয় 'রেডিও ক্লাব অফ আমেরিকা' বা আরসিএ। এই প্রতিষ্ঠান ১৯৩৫ সালে এই বিশেষ ক্ষেত্রে যে বা যারা দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন তাঁদের উৎসাহ দিতে পুরষ্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আরসিএ-এর তরফে প্রথম পুরষ্কার দেওয়া হয় মেজর এডউইন এইচ আর্মস্ট্রংকে। এম এবং এফএম রেডিও'র জন্য যে সার্কিট দরকার হয় সেই সার্কিট আর্মস্ট্রং আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর নামেই আরসিএ-এর দেওয়া এই পদক বা পুরষ্কারের নাম হয় আর্মস্ট্রং মেডেল।

    (ছবি: আইআইএসসি, বেঙ্গালুরু)
  • Link to this news (আজকাল)