জলপাইগুড়ির দেবাশিসের তৈরি ‘মিনি দুর্গা’র চাহিদা বিদেশেও!
বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: পেশায় তিনি মুদি। কিন্তু নেশায় প্রতিমা শিল্পী। নেশার টানেই ফি বছর গড়েন মাটির দুর্গা। তবে জলপাইগুড়ির রাখালদেবী এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস ঝা’র বিশেষত্ব, তিনি তৈরি করেন ‘মিনি দুর্গা’। তাঁর হাতে গড়া সেই দুর্গার কদর দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও।
ছোটবেলা থেকেই দুর্গাপ্রতিমা গড়েন দেবাশিস। এখন বয়স ৫৫। জীবনে অনেক চড়াই উতরাই পার করেছেন। কিন্তু প্রতিমা গড়ার উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। মুদিখানা আর মাঝেমধ্যে পুরোহিতের কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হলেও, ছাড়তে পারেননি মাতৃমূর্তি গড়ার নেশা।
জলপাইগুড়ির খড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তার ধারে ছোট্ট ঘরে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বাস দেবাশিসের। পরিবারে কেউ কোনওদিন প্রতিমা শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু কীভাবে যে তাঁর মাথায় মূর্তি গড়ার নেশা চাপল, আজও ভেবে পান না ওই প্রৌঢ়। বললেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই কাদামাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করি। প্রথমে বড় দুর্গা বানাতাম। কিন্তু তারপর মেলায় কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল দেখে আকৃষ্ট হয়ে মিনি দুর্গা বানাতে শুরু করেন।
নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ‘মিনি দুর্গা’র শিল্পী হিসেবে জলপাইগুড়ি জেলায় এখন অন্যতম পরিচিত মুখ দেবাশিস। কখনও ৫ ইঞ্চির মাটির দুর্গা বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন। কখনও আবার গড়েছেন ১০ ইঞ্চির দুর্গা। দেবাশিসের তৈরি দুর্গা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি গিয়েছে অসম, রাজস্থান এমনকী নেপালেও।
এবছর চারটি মিনি দুর্গা বানিয়েছেন দেবাশিস। একটি আট ইঞ্চির। বাকি তিনটি ৬ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি ও ১২ ইঞ্চি। একটি প্রতিমা ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ির কদমতলার একটি পুজো কমিটি ওই প্রতিমা নিয়েছেন। এছাড়া নেপাল থেকেও ফোন এসেছে। শিল্পীর আশা, অন্য বছরের মতো এবারও তাঁর হাতে গড়া প্রতিমা ভিনরাজ্যে কিংবা বিদেশে যাবে।
বাড়িতেই মুদিখানা। সেই দোকান সামলে মিনি দুর্গা গড়তে গিয়ে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয় দেবাশিসকে। সেকারণে সংসার সামলে স্ত্রী বেবি ঝা প্রতিমা তৈরির কাজে সাহায্য করেন স্বামীকে। ছেলে হিপ্তেশ আইটিআই পড়ছেন।
জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কমার্স কলেজ থেকে স্নাতক দেবাশিস। চাকরি পাননি। আবার প্রতিমা গড়ার কাজকেও পুরোপুরি পেশা করতে পারেননি। খুলতে হয়েছে মুদিখানা। বললেন, মিনি দুর্গার সাজ, অস্ত্র বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। নিজে হাতেই সেসব তৈরি করি। পেট না ভরলেও তিলে তিলে গড়া প্রতিমা সাজিয়ে মন ভরে যায়। প্রতিমা বানাচ্ছেন দেবাশিস। - নিজস্ব চিত্র।