• কোচবিহারে বড়দেবীর পুজোর প্রস্তুতি শুরু ৩১ আগস্ট মাতৃমন্দিরে আনা হবে ময়নাকাঠ
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: কোচবিহারের মহারাজাদের প্রচলিত বড়দেবীর পুজো আর পাঁচটা দুর্গাপুজোর থেকে একেবারেই আলাদা। পুজোর নিয়মকানুন থেকে শুরু করে মূর্তির আদল সবই এখানে পৃথক। আর বলি প্রথার ভিন্নতা এই পুজোকে একেবারে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এখানে গুঞ্জবাড়ি মন্দিরে ময়নাকাঠের পুজো হয়ে গিয়েছে। ময়নাকাঠ এখন মদনমোহন মন্দিরে রয়েছে। বড়দেবীর মন্দিরে গৃহারম্ভ পুজো হয়ে গিয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট ময়নাকাঠ বড়দেবীর মন্দিরে যাবে। এরপরেই হবে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। চামটা এলাকা থেকে মূর্তি তৈরির জন্য মাটি নিয়ে আসা হয়। ওই মাটি দিয়ে বড়দেবীর মুখ নির্মাণ করা হয়। এবার এখানে ১৪ সেপ্টেম্বর অষ্টমীর গৃহারম্ভ পুজো। ২২ সেপ্টেম্বর ঘট স্থাপন। ২৮ সেপ্টেম্বর বিল্ববরণ। ২৯-৩০ সেপ্টেম্বর সপ্তমী-অষ্টমী ও ১-২ অক্টোবর নবমী ও দশমী। 

    প্রতি বছরের মতো এবারও বড়দেবীর মন্দির, মদনমোহন মন্দিরের কাঠামিয়া মন্দির ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দিরে একটি করে মোট তিনটি মোষ বলি দেওয়া হবে। এছাড়াও বড়দেবীর মন্দির ও কাঠামিয়া মন্দিরে মোট ২০টি পাঁঠা বলি হবে। পাশাপাশি ২০ জোড়া পায়রা,একটা হাঁস ও এক জোড়া মাগুর মাছ বলি দেওয়া হবে। বড়দেবীর পুজোয় এক সময় নরবলির প্রচলন ছিল বলে কথিত আছে। এই পুজোয় এখনও একজন নিজের দেহের থেকে রক্ত দেন। এখানে নিশাপুজো, চালিয়াবালিয়া পুজোর রীতি রয়েছে।

    কোচবিহারের মহকুমা শাসক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বড়দেবীর পুজোর কিছু রীতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতি চলছে। রাজ আমলের সমস্ত রীতি মেনে বড়দেবীর পুজো হবে।

    কোচবিহারের ভূমিপুত্র তথা বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক কুমার মৃদুলনারায়ণ বলেন, বড়দেবীর পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে শক্তি পুজোর প্রচলন রয়েছে। এখানকার মহারাজারা শিব ও কালী আরাধনা করতেন। এক সময় নরবলি হতো। মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের সময় সেই বলিপ্রথা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু খাপাইডাঙার শিবেন্দ্রনাথ রায় রক্ত প্রদান করতেন।

    কোচবিহারের বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ঋষিকল্প পাল বলেন, বড়দেবীর মন্দির অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার আগে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনটি পৃথক ঘরে পুজো হতো। মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণের সময়ে ১৯১৫ সাল নাগাদ এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। বড়দেবীর মন্দিরটি ইউরোপীয় যে শৈলীতে তৈরি, এমন মন্দির পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও আছে কি না সন্দেহ। 

    এখানকার নরবলি সম্পর্কে জানা যায়, যাঁদের নরবলি দেওয়া হতো তাঁদের বলা হতো ভোগ। পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে রক্ত প্রদানের রীতি চালু হয়। এখানে সহস্র বলি প্রথা প্রচলিত ছিল।  ফাইল চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)