• কৃষি ঋণের টোপ গিলে ফ্যাসাদে শিলিগুড়ির পানিঘাটার বাসিন্দারা, ভুয়ো ঠিকানা দাখিল করে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: কৃষি ঋণের টোপ! তাতেই ফেঁসে গিয়েছে পানিঘাটার বহু মানুষ। তাঁদের নামে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ থেকে ব্যাংকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলিতে বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন করছে প্রতারণাচক্র। ব্যাংকের পরিভাষায় যা ‘মিউল’ অ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচিত। 

    তিন মাসে পানিঘাটার প্রায় ৮৪ জনের নামে তৈরি হয়েছে মিউল অ্যাকাউন্ট!  শিলিগুড়ি পুরসভা থেকে অনলাইনে এঁদের নামে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে। এজন্য পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দার্জিলিং জেলা পুলিসের পানিঘাটা আউটপোস্ট। কিন্তু ইস্যু হওয়া ট্রেড লাইসেন্সগুলির নামে দোকান বা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি পুরসভা। সমগ্র ঘটনা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। 

    দার্জিলিং জেলার মিরিক থানার অধীনে পানিঘাটা আউটপোস্ট। এলাকার অধিকাংশ মানুষই কৃষক। কেউ কেউ ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। অভিযোগ, কয়েক মাস আগে কৃষি ঋণ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে গ্রামবাসীদের নামে ট্রেড লাইসেন্স বের করা হয়। তাঁদের নামে ব্যাংকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু ব্যাংকের পাসবই ও ট্রেড লাইসেন্সের তথ্য গ্রামবাসীদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নেমে পুলিস প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস করেছে। 

    পুলিস সূত্রে খবর, কৃষি ঋণের টোপ দিয়ে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আধার ও প্যানকার্ড হাতিয়ে নেয় ওই চক্র। সেগুলির মাধ্যমেই ট্রেড লাইসেন্স জোগাড় করা হয়। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। প্রতারণা চক্র সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের লেনদেন করেছে। দার্জিলিংয়ের পুলিস সুপার প্রবীণ প্রকাশ বলেন, কয়েকদিন আগে গ্রামবাসীদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সমস্ত দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

    ওই ট্রেড লাইসেন্সগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পানিঘাটা আউটপোস্ট। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন মাসে সুকৌশলে প্রায় ৮৪ জনের নামে মিউল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। যারমধ্যে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য দিতে পেরেছে পুরসভা। তারা এখনও বহু অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারেনি। 

    পুরসভার এক অফিসার জানান, প্রথমে দু’টি ট্রেড লাইসেন্সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। যাঁদের নামে লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে, দু’জনেই পানিঘাটার বাসিন্দা। শিলিগুড়িতে তাঁদের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে - এসএফ রোড, ৫ নম্বর ওয়ার্ড। বাস্তবে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও এসএফ রোড নেই। আর এসএফ রোডেও ওই দুই ব্যক্তির নামে কোনও দোকান নেই। এরপর আরও ১০টি ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চায় পুলিস। সেইগুলির প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব মেলেনি। বেশ কিছুদিন আগে সংশ্লিষ্ট আউটপোস্টের পুলিস আরও ৭২টি ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। সেগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য দিলীপ বর্মন অবশ্য বলেন, এক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের কোনও ত্রুটি নেই। যখন থেকে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে, তখন থেকেই ভুয়ো তথ্য দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)