নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: চড়া হারে সুদের লোভ দেখিয়ে মাইক্রো ফিনান্স সংস্থা খুলে বসেছিল এক দম্পতি। সাধারণ মানুষের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল তারা। সম্প্রতি জমা টাকা ফেরত চাইছিলেন ওই সংস্থার গ্রাহকরা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে ওই দম্পতির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়ে যাওয়াতেই আত্মঘাতী দম্পতি।
জানা গিয়েছে, মৃত দম্পতির নাম স্বপন বিশ্বাস (৪৩) এবং পিঙ্কি বিশ্বাস (৩৫)। ধানতলা থানা এলাকার বহিরগাছি বাজার এলাকার বাসিন্দা তাঁরা। প্রায় সাড়ে তিন-চার বছর আগে স্বল্প সঞ্চয় ও স্বল্প ঋণদানকারী একটি সংস্থা খুলে ব্যবসা শুরু করে ওই দম্পতি। নাম দেওয়া হয় ‘লিতা গ্রামীণ উন্নয়ন লিধি লিমিটেড’। এলাকাবাসীর দাবি, চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে প্রথমে গ্রামের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে এবং পরে আড়ংঘাটা, বগুলা, কুলগাছি সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রাঞ্চ অফিস খুলে চলে মোটা টাকা তোলা। সবমিলিয়ে সেই অংক বেশ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে বলে অনুমান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এর প্রতিবেশী বলেন, আমার পরিচিত একজনকে মোটা টাকা কমিশনের লোভ দেখিয়ে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছিল ওরা। তার মাধ্যমেই ২২ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল। সেই সমস্ত টাকার হদিশ নেই। আরেক বাসিন্দা বলেন, ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। তাই কয়েক কোটি টাকা নয়ছয় তো হয়েছে বটেই। পুলিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে বাড়ির বন্ধ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই দম্পতিকে। খবর পেয়ে পুলিস তাদের দেহ উদ্ধার করে। এরপর নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে দেহ দু’টি রানাঘাটের পুলিস মর্গে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ৮ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে ওই দম্পতির। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আচমকাই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল তারা। প্রাপ্য টাকা আত্মসাৎ হওয়ার আতঙ্কে তাদেরই কয়েকজন কর্মচারী ধানতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করে ৯ আগস্ট। যদিও কয়েকদিনের মধ্যে ফিরেও আসে তারা। এরপর নিয়মিত টাকা ফেরত চেয়ে গ্রাহকরা তাগাদা দিচ্ছিলেন ওই দম্পতিকে। হচ্ছিল সমস্যাও। এরই মাঝে দুইজনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, বাজার থেকে তোলা টাকা নয়ছয় হয়ে যাওয়ার কারণেই সম্ভবত আত্মঘাতী হয়েছে ওই দম্পতি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার রুজু হয়েছে। তার ভিত্তিতেই লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানার চেষ্টা চলছে, বাজার থেকে কত টাকা তারা তুলেছিল ওই আর্থিক সংস্থা মারফত।