দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
সেপ্টেম্বরের শুরুতেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা। নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ২০১৬ স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরিহারা শিক্ষকরা। কিন্তু তার জন্য তো আলাদা করে ছুটি নেই! স্কুলের পঠনপাঠন সামলে কী ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন শিক্ষকরা? কাজেই চাকরিহারা অধিকাংশ শিক্ষক শরণ নিয়েছেন মেডিক্যাল লিভের! মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে সপ্তাহে ২- ৩ দিন ছুটি নিয়ে প্রস্তুতিতে মগ্ন তাঁরা।
মানবিকতার কারণে শিক্ষকদের মেডিক্যাল লিভের অনুমোদন দিচ্ছে শিক্ষা দপ্তরও। তবে, এক সঙ্গে এতজন শিক্ষক ছুটিতে চলে যাওয়ায় পঠনপাঠনে সমস্যা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ২০১৬ স্কুল সার্ভিস কমিশনের পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শিক্ষক, গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি কর্মচারী মিলিয়ে চাকরিহারা হন প্রায় ২৬ হাজার জন।
পরে রাজ্য সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট দাগী নন, এমন শিক্ষকদের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি দেয়। পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকদের নতুন করে যোগ্যতা যাচাইয়ের কথা বলা হয় নির্দেশে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশম এবং ১৪ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশ বিভাগের পরীক্ষা।
পরীক্ষায় যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য পাবেন অতিরিক্ত ১০ নম্বর। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দরকার ছুটি। একজন চাকরিরত শিক্ষক বছরে ১৪টি ক্যাজ়ুয়াল লিভ পান। বছরে পনেরোটি করে সারা চাকরি জীবনে মোট ৩৬৫ দিন মেডিক্যাল লিভ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ২ টি অর্ধ বেতন ছুটির পরিবর্তে শিক্ষকরা একটি পূর্ণ বেতনের ছুটি পেয়ে থাকেন। একে বলা হয় কমিউটেড লিভ।
একজন শিক্ষক চাকরিজীবনে সর্বাধিক ১৮০ দিন কমিউটেড লিভ পেতে পারেন। ক্যাজ়ুয়াল লিভ বাদে বাকি সমস্ত ছুটির জন্য শিক্ষককে শিক্ষা দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। ইতিমধ্যে চাকরিহারা অধিকাংশ শিক্ষক বছরের ১৪টি ক্যাজ়ুয়াল লিভের মধ্যে ৭ থেকে ৮টি খরচ করে ফেলেছেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তাই তাঁদের ভরসা মেডিক্যাল লিভ। কেউ কেউ নিয়েছেন কমিউটেড লিভ। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন এ ভাবে ছুটি নিয়ে পড়াশোনা করছেন শিক্ষকরা।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য মেডিক্যাল লিভের প্রচলন থাকলেও চাকরিহারা শিক্ষকদের পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা ভেবে শিক্ষা দপ্তর দ্রুত মেডিক্যাল এবং কমিউটেড লিভে অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। পূর্ব মেদিনীপুরের এক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘আমার স্কুলের ৬ জন শিক্ষক স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দেবেন। প্রস্তুতির জন্য প্রত্যেকেই সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করে মেডিক্যাল লিভ নিচ্ছেন।
এ ছাড়া ওঁদের কোনও রাস্তা নেই। ওঁরা যে দিন স্কুলে আসছেন, আমরা ওঁদের উপরে বেশি ক্লাসের বোঝা দিচ্ছি না, যাতে ওঁরা পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো ভাবে নিতে পারেন।’ এক হাইস্কুলের শিক্ষিকা বলেন, ‘নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ— দুই বিভাগেই পরীক্ষা দেব। স্কুলে গেলে প্রস্তুতির ব্যাঘাত ঘটবে। কমিউটেড লিভ নিয়ে বাড়িতে পড়াশোনা করছি।’
এক সঙ্গে এত জন শিক্ষক ছুটি নেওয়ায় বিভিন্ন সরকারি স্কুলে পঠনপাঠন ব্যাহত। পড়ুয়াদের এই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকরা। এ নিয়ে কী বলছে শিক্ষা দপ্তর? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য চাকরিহারা শিক্ষকদের ছুটি নিতেই হচ্ছে। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।’