• হাওড়া থেকে শিয়ালদহ পৌঁছে দেবে ১২ মিনিটেই! গঙ্গার নীচ দিয়ে এক টিকিটে বিমানবন্দরে, পরিবহণের ভোল বদলাবে মেট্রো
    আনন্দবাজার | ২০ আগস্ট ২০২৫
  • দুর্গাপুজোর আগেই কলকাতা শহর জুড়ছে নতুন তিন মেট্রো লাইন। আগামী শুক্রবার উদ্বোধন হচ্ছে কলকাতা মেট্রোর তিনটি সম্প্রসারিত লাইন। নোয়াপাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে দমদম বিমানবন্দর (জয় হিন্দ)। শিয়ালদহের সঙ্গে যুক্ত হবে এসপ্ল্যানেড। রুবির (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে জুড়বে বেলেঘাটা (মেট্রোপলিস)। মোট ১৪ কিলোমিটারের পথ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের পথ শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড। মাত্র ২.৬ কিলোমিটার। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটিই। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর এই অংশটুকু চালু হয়ে গেলে কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থারই ভোল বদলে যেতে পারে। অভ্যাস বদলে দিতে পারে নিত্যযাত্রীদের।

    কলকাতার যানজট এড়িয়ে দ্রুত এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে শহরবাসীর অন্যতম পছন্দের পরিষেবা মেট্রো। তবে এত দিন তাতে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। গত বছর গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পরেও সেই সীমাবদ্ধতা কাটেনি। অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল অসম্পূর্ণ ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো (গ্রিন লাইন)। এ বার সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে, শহরের যানজট এড়িয়ে মাত্র ১২ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যেতে পারবেন যাত্রীরা। বর্তমানে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোয় প্রতি দিন গড়ে ১ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। পরিষেবা পুরোদমে চালু হয়ে গেলে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা ৭ লক্ষ পেরিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করছেন কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি।

    ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা পুরোদমে চালু হলে, তার সুবিধা পাবে কলকাতার দুই অফিসপাড়াও। এসপ্ল্যানেড চত্বরের অফিসপাড়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে এত দিন শুধু হাওড়া স্টেশন থেকেই মেট্রোর সুবিধা পাওয়া যেত। এখন শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও সেই সুবিধা মিলবে। পাশাপাশি, হাওড়া থেকে সরাসরি মেট্রোয় চেপে পৌঁছে যাওয়া যাবে কলকাতার তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র বলে পরিচিত সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। এত দিন এই সুবিধা শুধু শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মিলত।

    হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে বা উল্টোপথে যাতায়াত করতে গেলে এত দিন বাস বা ট্যাক্সি পরিষেবার উপরেই বেশি নির্ভর করতে হয়েছে। শহরে যানজটের জন্য অনেকটা সময়ও লেগে যায় এতে। তবে নতুন তিন পরিষেবা চালু হয়ে গেলে এক টিকিটেই মেট্রোয় চেপে হাওড়া ময়দান থেকে পৌঁছে যাওয়া যাবে দমদম বিমানবন্দরে। যদিও মাঝে দু’বার মেট্রো বদল করতে হবে। হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত এসে মেট্রো বদলাতে হবে। তার পরে এসপ্ল্যানেড থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত গিয়ে আবার নতুন মেট্রো ধরতে হবে। তৃতীয় মেট্রো পৌঁছে দেবে বিমানবন্দরে। নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারিত এই মেট্রো রুটে মোট দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। মেট্রো বদল করতে হলেও বার বার টিকিট কাটতে হবে না। সব রুটে চলবে একই স্মার্টকার্ড। যানজটও এড়ানো যাবে।

    সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প এত দিন দু’টি ভাগে চালু ছিল। প্রথমে চালু হয় সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ স্টেশন (গ্রিন লাইন ওয়ান) পর্যন্ত অংশ। গত বছর থেকে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড (গ্রিন লাইন টু) পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবাও চালু হয়ে যায়। কিন্তু শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মেট্রোর কাজে বার বার বিঘ্ন ঘটেছে অতীতে। বিশেষ করে বৌবাজার এলাকায় ধসের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-কে। এ বার সেই বাধা কাটিয়ে জুড়ে যাচ্ছে শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেডও। চালু হচ্ছে গোটা ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো। পাশাপাশি, প্রায় ৪.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রুবি-বেলেঘাটা রুটও উদ্বোধন হবে। বর্তমানে সংস্কারের কাজের জন্য কবি সুভাষ এবং শহিদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনের মধ্যে পরিষেবা (ব্লু লাইন) অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এই পরিষেবা চালু হয়ে গেলে বেলেঘাটা থেকেও এক টিকিটে পৌঁছে যাওয়া যাবে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশনে বা দমদম বিমানবন্দরে।

    বর্তমানে দিনের ব্যস্ত সময়ে সেক্টর ফাইভ-শিয়ালদহ এবং হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ১২ মিনিট অন্তর এবং অন্য সময়ে ১৫ মিনিট অন্তর মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যায়। সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পুরোদমে চালু হয়ে গেলে যাত্রীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে এই ব্যবধান কমিয়ে আনা হবে। তখন দিনের ব্যস্ত সময়ে আট মিনিট অন্তর পরিষেবা পাওয়া যাবে। অন্য সময়ে ১০ এবং ১৫ মিনিট অন্তর পরিষেবা মিলবে।

    ১৯৮৪ সাল থেকে কলকাতা মেট্রোর পথ চলা শুরু। প্রথমে এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুরের মধ্যে পরিষেবা চালু হয়। তার পরে গত চার দশক ধরে পরিষেবা সম্প্রসারিত হয়েছে। অতীতে যখন প্রধানমন্ত্রী বা রেলমন্ত্রীর হাত ধরে কোনও মেট্রো পরিষেবার উদ্বোধন হয়েছে, তখন সঙ্গে সঙ্গে তা চালু হয়নি। ২০২০ সালে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত পরিষেবার উদ্বোধন হয় তৎকালীন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের হাত ধরে। সাধারণের জন্য পরিষেবা চালু হয়েছিল তার পরের দিন থেকে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়। সাধারণের জন্য পরিষেবা চালু হয়েছিল তারও ৯ দিন পরে। আগামী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড-সহ মোট তিনটি সম্প্রসারণের উদ্বোধন হবে। মেট্রোর একটি সূত্রের দাবি, মোদীর হাত ধরে উদ্বোধনের পরেই সাধারণের জন্য চালু হয়ে যেতে পারে শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড মেট্রো পরিষেবা। বাকি দু’টি লাইনে উদ্বোধনের ৪৮ ঘণ্টা পরে, অর্থাৎ সোমবার থেকে সাধারণের জন্য পরিষেবা চালু হতে পারে। যদিও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানাননি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)