ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। শেষ পর্যন্ত পুরুলিয়া জেলার আড়শায় পুলিশের ‘মারে’ যুবক বিষ্ণু কুমারের মৃত্যুর অভিযোগের সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দেন, ডিআইজি (সিআইডি) এই ঘটনার তদন্তের নজরদারি করবেন। সিআইডি (হোমিসাইড) দফতর থেকে নিজের পছন্দ মতো আধিকারিকদের নিয়ে একটি দল তৈরি করবেন ডিআইজি। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই ঘটনা সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিআইডি-কে দিতে হবে আড়শা থানার তদন্তকারী অফিসারকে। বিচারপতির আরও নির্দেশ, ঘটনার তদন্ত করে আগামী শুনানির দিন, অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট দেবে সিআইডি। সে দিন তাদের কেস ডায়েরি ও রাজ্য পুলিশের তদন্তের কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করতে হবে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, দু’টি ময়না তদন্তের রিপোর্টে বিস্তর ফারাক রয়েছে। প্রথম রিপোর্টে মৃতদেহে ক্ষতের কোনও উল্লেখ ছিল না। কিন্তু এমসের ময়না তদন্তের রিপোর্টে মৃতদেহে ক্ষত চিহ্নের স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। এ দিনও পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনার তদন্তে বিকল্প কোনও পথ খোলা না রেখে নির্দিষ্ট ধারণা নিয়ে তদন্ত চালিয়েছে আড়শা থানার পুলিশ।’’
মৃত বিষ্ণু কুমারের ভাই সমন কুমারের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার পুরুলিয়ার মর্গে প্রথম ময়না তদন্ত করা চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানান। আইনজীবীর অভিযোগ, শেষকৃত্য করার জন্যে মৃতদেহ ফেরানোর আবেদন করলেও কোনও উত্তর মেলেনি পুলিশের থেকে।
রাজ্যের আইনজীবী যদিও দাবি করেন যে, মৃতদেহ ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কোনও আবেদন করেননি মৃত যুবকের পরিবার। বিচারপতির নির্দেশ, যুবকের মৃতদেহ ফেরানোর জন্য পুরুলিয়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করবে পরিবার। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ নির্দেশ দেবেন ম্যাজিস্ট্রেট।
মৃত বিষ্ণুর ভাই সমন কুমার বলেন, ‘‘আদালত সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় স্বস্তি পেলাম। সিআইডি যেন সঠিক তদন্ত করে।’’ তিনি জানান, আজ, বুধবার সৎকারের জন্য ভাইয়ের দেহ নিতে তিনি পুরুলিয়া আদালতে আবেদন করবেন। বিষ্ণুর মৃত্যুর বিচার চেয়ে ১২ ঘণ্টা আড়শা বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। জোর করে বন্ধ করানোর অভিযোগে পুলিশ অনাদি কুমার-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছিল। ১৪ দিন পরে জেল থেকে তাঁরা ছাড়া পান। অনাদি কুমার বলেন, ‘‘আমরা ন্যায্য বিচার চাই। আদালতের রায়কে তাই স্বাগত জানাই। তবে সিআইডি যেন সঠিক তদন্ত করে।’’
যে পথে রায়
১৬ জুলাই: বিষ্ণুর পরিবারের অভিযোগ, মোবাইল ফোন চুরির মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে আড়শা থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। পরে ছেড়ে দিলেও ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন বিষ্ণু
১৯ জুলাই: স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিষ্ণুর মৃত্যু। দেহ ময়না তদন্ত করার দাবি পরিবারের। পরে পুলিশের অত্যাচারে বিষ্ণুর মৃত্যুর অভিযোগ জেলা পুলিশের কাছে ইমেলে। যদিও প্রথম ময়না-তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে পুলিশ দাবি করেছিল, অসুস্থতার কারণে বিষ্ণুর মৃত্যু হয়েছে
৭ অগস্ট: হাই কোর্টের নির্দেশে কল্যাণী এমসে দ্বিতীয় ময়না-তদন্ত হল
১৪ অগস্ট: দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট জমা হাই কোর্টে। দুই ময়না তদন্তের রিপোর্টে বিস্তর ফারাক, মন্তব্য বিচারপতির। রাজ্যের আইনজীবীর দাবি, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা আগে বিষ্ণুর দেহে আঘাত লেগেছিল। তখন তিনি পুলিশ হেফাজতে ছিলেন না