• এমস-সমীক্ষায় চাওয়া হয় নথি, দাবি গ্রামবাসীর
    আনন্দবাজার | ২০ আগস্ট ২০২৫
  • পরিবারে মানসিক ভাবে অসুস্থ কেউ রয়েছেন কি না তা যেমন জানতে চাওয়া হচ্ছিল, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং অন্য নথিও দেখতে চাওয়া হয়। মাস তিনেক আগে, মানসিক স্বাস্থ্যের সমীক্ষা করতে নদিয়ার কল্যাণীর সগুনা পঞ্চায়েতের বসন্তপুর গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে যাওয়া এমস হাসপাতালের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা, দাবি এলাকাবাসীর। যে সমীক্ষা নিয়ে সোমবার প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা পরোক্ষে এনআরসি-র সমীক্ষা বলেও অভিযোগ করেন। এমসের পাল্টা দাবি ছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) অনুমোদিত প্রশ্ন-তালিকার ভিত্তিতেই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা চলছে।

    সগুনা পঞ্চায়েতের একটা বড় অংশে উদ্বাস্তুরা থাকেন। মঙ্গলবার বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেন, বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা করতে এসে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলেন কল্যাণী এমসের প্রতিনিধিরা। পরিবারে মানসিক ভাবে অসুস্থ কেউ রয়েছেন কি না তা যেমন জানতে চাওয়া হচ্ছিল, তেমনই সরকারি পরিচয়পত্র, নথি আছে কি না জানতে-দেখতেও চাওয়া হয়।

    বসন্তপুরের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের এক মহিলা বলেন, “ওঁরা প্রথমে শারীরিক বা মানসিক সমস্যার বিষয়ে প্রশ্ন করছিলেন। পরে জানতে চান, কত বছর ধরে এলাকায় আছি, কী-কী নথিপত্র রয়েছে ইত্যাদি।” এলাকার এক বৃদ্ধ বলেন, “যাঁরা সমীক্ষায় এসেছিলেন, তাঁরা আমি আগে কোথায় থাকতাম, এখন যেখানে থাকি, সেখানে জমির দলিল রয়েছে কি না, এ সব জানতে চেয়েছিলেন।”

    সে সব প্রশ্ন এবং নথির সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক বুঝতে না পেরে তৃণমূল পরিচালিত সগুনা পঞ্চায়েতের তরফে আপত্তি তোলা হয়। পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য জয়নুল মণ্ডলের দাবি, “এমসের তরফে প্রথমে আশাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তার পরে সমীক্ষা শুরু হয়। পরিবারে কত পুরুষ, কত মহিলা ইত্যাদি তথ্য জানা ছাড়াও, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি চাওয়া হয়। তাতেই অনেক গ্রামবাসী আপত্তি জানান।” সগুনা পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের সুনীল রায় বলেন, “নথি চাওয়ার বিষয়টি জেনে, আমরা ওঁদের ব্লক বা জেলা স্তর থেকে অনুমতি আনতে বলি। ওঁরাআর আসেননি।”

    কল্যাণী ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক নীলাংশু দাস বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্যের সমীক্ষা করবে বলে কল্যাণী এমস আমাদের লিখিত জানিয়েছিল। কিন্তু কী-কী প্রশ্ন করা হবে, তার নমুনা দেয়নি। সমীক্ষা কোন পর্যায়ে রয়েছে, স্থগিত হয়েছে কি না, তা-ও জানানো হয়নি।”

    কল্যাণী এমসের জনসংযোগ আধিকারিক তথা মনোরোগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সুকান্ত সরকার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। অধিকর্তা রামজি সিংহ ফোন ধরেননি, মোবাইল-বার্তার জবাবও দেননি। কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় অবশ্য দাবি করেন, “এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য সমীক্ষার মতো বিষয় নিয়েও রাজনীতি করছেন!”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)