• ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ মেনে ব্লকে রদবদলের ইঙ্গিত অভিষেকের
    এই সময় | ২০ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়: শুভেন্দু অধিকারীর দুর্গ বলে পরিচিত নন্দীগ্রাম বিধানসভার তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ক্যামাক স্ট্রিটে মঙ্গলবার তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবে এই বৈঠক ঠিক কবে হবে, তা এ দিন জানাননি অভিষেক।

    এ দিনের বৈঠকে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রবীণ এক নেতার কথায়, ‘অভিষেক বলেছেন, তিনি নন্দীগ্রামকে নিয়ে পৃথক বৈঠক করবেন। কেন শুধু নন্দীগ্রামের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন, তার বিশদ ব্যাখ্যা তিনি দেননি। এই বৈঠকে নন্দীগ্রামের ব্লক, অঞ্চল স্তরের নেতাদের সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি, চেয়ারপার্সনরাও সম্ভবত থাকবেন। বোঝাই যাচ্ছে, নন্দীগ্রাম নিয়ে অভিষেকের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।’

    অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে অভিষেক সাংগঠনিক জেলাভিত্তিক বৈঠক করলেও কোনও নির্দিষ্ট বিধানসভাকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেননি। এই প্রথম তিনি শুধু একটি বিধানসভার তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর ডুয়েলের কারণে নন্দীগ্রামের দিকে সারা দেশের নজর ছিল।

    ২০২১–এর বিধানসভা, ’২৩–এর পঞ্চায়েত এবং ’২৪–এর লোকসভা ভোটেও শুভেন্দু ধারাবাহিক ভাবে নন্দীগ্রামে গেরুয়া শিবিরের দাপট অব্যাহত রেখেছেন। ’২৬–এর বিধানসভা ভোটে শুভেন্দুর গড়ে ধাক্কা দিতে অভিষেক নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করেছেন বলে পূর্ব মেদিনীপুরের নেতাদের পর্যবেক্ষণ।

    ২০২৪–এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘আমি আজ নয় তো কাল এর বদলা নেব। চিরকাল বিজেপি থাকবে না।’ নন্দীগ্রামে ’২১–এর বদলা নিতেই অভিষেক ঘঁুটি সাজাতে শুরু করেছেন বলে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য। পূর্ব মেদিনীপুরের অভিজ্ঞ এক নেতার কথায়, ‘অভিষেক সম্ভবত নন্দীগ্রামে দলীয় সংগঠন থেকে ভোটের রণনীতির জন্য কোনও নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দিতে পারেন। একটি কোর টিমও তৈরি করে দিতে পারেন।’

    ’২৪–এর লোকসভা ভোটেও তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত সমস্ত বিধানসভায় বিজেপি লিড নিয়েছে। সূত্রের দাবি, এই কারণে অভিষেক তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতাদের বলেছেন, ‘লোকসভার ফল অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সব আসনে মোকাবিলা করতে হবে।’

    যদিও তমলুক সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের অন্দরে যে প্রব‍ল গোষ্ঠীকোন্দল যে রয়েছে, তা এ দিন অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকেই বেরিয়ে পড়েছে। সূত্রের খবর, এই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত রায় এবং গেরুয়া শিবির থেকে জোড়াফুলে আসা হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল অভিষেকের সামনেই আইএনটিটিইউসি–র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ শ্রমিক সংগঠনের একাংশের বিরুদ্ধে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক ইউনিয়নের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ করেছেন।

    যদিও সৌমেন মহাপাত্র–সহ অন্য নেতারা এঁদের সুরে সুর মেলাননি। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে ঋতব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দলীয় বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানি না। তবে সুজিত অথবা তাপসীর যদি কোনও অভিযোগ থাকে, আমি চ্যালেঞ্জ করছি তার প্রমাণ দলকে দিন।’

    তমলুকের মতোই বারাসত সাংগঠনিক জেলায় কোন্দল রয়েছে। কখনও কাকলিকে ইঙ্গিত করে নারায়ণ গোস্বামী কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সুজিত বসু ও সব্যসাচী দত্তের মধ্যে সম্পর্কও মসৃণ নয় বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। এই কোন্দল বন্ধ করে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক।

    এই বৈঠকের পরে বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘আপনার বাড়িতে জেঠিমা, কাকিমা, মায়ের মধ্যে কখনও অশান্তি হয় না? একটা সংসার চালাতে গেলে কিছু কিছু (অশান্তি) হয়। আমরা আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে নিই। দল ভালো চলছে, এটাই তার প্রমাণ। সবাই একসঙ্গেই রয়েছি আমরা।’

    তৃণমূল সূত্রের খবর, বারাসত সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি অভিষেক প্রবীণ নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন। এই বৈঠকের পরে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘কোনও দূরত্ব নেই বারাসতে, আমরা সবাই এক রয়েছি। ঐক্যবদ্ধ ভাবে ২০২৬–এর লড়াই হবে। আমরা বলেছি, দল যে পদে কাজ করার দায়িত্ব দেবে, সেই পদেই কাজ করব। আমরা প্রত্যেকেই ৩০–৩৫ বছর দল করছি। দল প্রবীণদের গুরুত্ব দিচ্ছে, নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে কাজ হচ্ছে।’

    তৃণমূলের ব্লক স্তরে সাংগঠনিক রদবদল এখনও বকেয়া রয়েছে। কয়েকটি শাখা সংগঠনেও রদবদল বাকি আছে। আগামী দিনে যে সাংগঠনিক রদবদল হবে, সেখানে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি অনুসরণ করা হবে বলে অভিষেক জানিয়েছেন। সূত্রের দাবি, অভিষেক বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি দু’টি পদ আঁকড়ে থাকবেন— দ‍ল এটা চাইছে না।’

    যুব সংগঠনের নেতৃত্বে চল্লিশোর্ধ্ব কাউকে না–রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। যুব সংগঠনের কোনও নেতার বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলে তাঁকে যুব ছেড়ে তৃণমূলের মূল সংগঠনে কাজ করতে হবে। উত্তর ২৪ পরগনার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘ব্লক সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি— এমন একাধিক পদে থাকা যাবে না, এই বার্তা দিতে চেয়েছেন অভিষেক।’ কাকলি, জ্যোতিপ্রিয়দের সঙ্গে এই বৈঠকে সুজিত, সব্যসাচী, রথীন ঘোষ, চিরঞ্জিৎ প্রমুখরা উপস্থিত ছিলেন। আজ, বুধবার, কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট সাংগঠনিক জেলাকে নিয়ে বৈঠক করবেন অভিষেক।

  • Link to this news (এই সময়)