আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়িটি থেকে বেশ কয়েকদিন ধরেই ভেসে আসছিল দুর্গন্ধ। বার বার বাড়িটিতে খোঁজ করতে গেলেও কেই কোনও কূলকিনারা করতে পারছিলেন না। অবশেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন জোর জবরদস্তি বাড়িটিতে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ। দেখা গেল ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে কুকুর এবং বিড়ালে মৃতদেহ। বস্তাবন্দি করে রেখে দেওয়া হয়েছে প্রাণীগুলির দেহাংশ। সেগুলিতে পোকা ধরে গিয়েছিল। এই ঘটনায় বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ।
এলাকার মানুষের অভিযোগ পর্ণশ্রী সাগর মান্না রোডের একটি বাড়িতে গত দেড় মাস ধরে কুকুর এবং বিড়ালের আশ্রয় কেন্দ্র চালাচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। বেশ কয়েকদিন ধরেই এই আশ্রয় কেন্দ্রের ভিতর থেকে পচা মৃতদেহের দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। স্থানীয় মানুষজন জিজ্ঞেস করলেও কোনও রকম উত্তর দিচ্ছিলেন না শেল্টারের কর্মীরা। সোমবার রাতে শেল্টারের কর্মচারীদের বাধা সত্ত্বেও এলাকায় মানুষজন জোরজবস্তি শেল্টারের ভিতরে ঢুকে পড়েন। তখন তাঁরা দেখতে পান যে শেল্টারের ভিতরে একাধিক মৃত কুকুর এবং বিড়ালের বাচ্চা পড়ে রয়েছে। চারিদিকে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আরও অভিযোগ বিভিন্ন কুকুরের বাচ্চাদের দেহাংশ কাটা। অনেক বাচ্চাগুলিকে প্লাস্টিকের মধ্যে ঢোকানো এবং তার মধ্যে পোকা ধরেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই সেন্টার চালানোর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও অসৎ উদ্দেশ্য আছে। যাঁরা আশ্রয় কেন্দ্রটি চালাচ্ছিল এলাকাবাসী তাঁদেরকে ধরে বেধড়ক মারধর করেন। পরবর্তীকালে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ এসে তাঁদেরকে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বেশ কিছু পশুপ্রেমী সংগঠনও ঘটনাস্থলে আসে। তাদের বক্তব্য তারা পর্ণশ্রী থানায় লিখিত অভিযোগ করতে চাইলেও কোনও রকম অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে না এমন কি যারা এই শেল্টার চালাতেন তাঁদেরকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শেল্টারের আড়ালে কী কী কাজ হতো? কেন কুকুরের দেহাংশ আলাদা করে রাখা ছিল? কেনই বা একটা শেল্টারের মধ্যে রক্ত পড়ে থাকবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে পর্ণশ্রী থানার তরফ থেকে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ।
গত ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে দিল্লি-এনসিআর এর রাস্তা থেকে সব পথকুকুরকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এই কাজে যে বা যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত কয়েক মাসে দিল্লিতে কুকুরের কামড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং রেবিস আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জে বি পারদেওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। ঠিক তার পর থেকেই উত্তাল দেশ। এই নির্দেশের বিরোধীতায় পথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির নির্দেশের উপর আংশিক স্থগিতাদেশের আর্জি জানান পশুপ্রেমীরা। ওই মামলা সরে যায় অন্য বেঞ্চে। বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা এবং বিচারপতি এন অঞ্জরিয়ার বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার শুনানিতে শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ, এই রায়দান স্থগিত রেখেছে, সূত্রের খবর তেমনটাই।