এভাবেও ফিরে আসা যায়! নিজের বাল্যবিবাহ রুখে শিক্ষয়িত্রী সেলিমা
প্রতিদিন | ২০ আগস্ট ২০২৫
অভিষেক চৌধুরি, কালনা: মাধ্যমিকে পড়াকালীন নিজের বিয়ে রুখেছিলেন। তারপর অদম্য জেদে স্নাতক হয়েছেন। ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি আজ একটি প্রাথমিক স্কুলের অতিথি শিক্ষক। নিজের বিয়ে আটকেই ক্ষান্ত থাকেননি তিনি। এক ডজনেরও বেশি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে ‘বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটির’ টিম সদস্য হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পুরস্কৃত হয়েছেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সেলিমা খাতুন।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম যশপুরের বাসিন্দা সেলিমা খাতুন। বাবা সাহিদুল শেখ ও মা সালেহারা শেখের চার মেয়ে ও এক ছেলে। সাত সদস্যের বড় পরিবার। পাঁচ বিঘা জমির চাষের উপর নির্ভর করে সংসার চলত। সেলিমা যখন মাধ্যমিকে, তখনই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছিল পরিবার। সেই বিয়ে রুখে দেন সেলিমা। উচ্চ মাধ্যমিকেও একই পরিস্থিতি হয়। সেবারও রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই ছাত্রী।
একদিকে তাঁর স্বপ্নপূরণের ইচ্ছা, অন্যদিকে পরিবারের বিয়ের চাপে স্বপ্নভঙ্গ হতে বসা পরিস্থিতিতেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তিনি। পাশে পান স্কুলের শিক্ষক-সহ প্রশাসনের আধিকারিকদের। শুরু হয় নতুন এক লড়াই। দোগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়ে তিনি মিনাপুর স্কুলের ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। প্রান্তিক এলাকার নাবালিকার বিয়ের খবর কানে আসতেই প্রশাসনের আধিকারিক, অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তিনি হাজির হতেন। এখনও পর্যন্ত তিনি এক ডজনের বেশি বিয়ে আটকেছেন। এলাকায় অল্পবয়সি মেয়েদের বিয়ে আটাকানোর জন্য, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটির একের পর এক সাফল্যের কারণে মিনাপুর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়কে ২০২৩ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কৃত করেন। ওই বছরই স্কুলটি একটি সংস্থার তরফেও পুরস্কার পায়। রাজ্য বিদ্যালয় পরিদর্শক কমিটিও ওই টিমের সাফল্যের জন্য স্কুলকে পুরস্কৃত করে। উচ্চশিক্ষার প্রতি তাঁর এই উৎসাহ ও স্বনির্ভর হয়ে ওঠার লড়াই আজ এলাকার ‘রোল মডেল’।
সেলিমা ২০২১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর স্নাতক হয়ে ডিএলএড করেন। বর্তমানে নিজের ছোটবেলার স্কুল মিনাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনি অতিথি শিক্ষক। হাতেকলমে শিক্ষায় শিক্ষিত হতে আজও তিনি সমানভাবে পড়ুয়ার ভূমিকায়। কারণ কয়েক মাস আগেই তিনি স্থানীয় বিদ্যানগরের আইটিআই কলেজের ড্রেস মেকিং বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। আজও নাবালিকার বিয়ের খবর পেলেই সেই বিয়ে আটকাতে মরণপণ লড়াই করেন। নাবালিকার বাড়িতে হাজির হন তিনি। মিনাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “খুব অল্প বয়সেই সেলিমার পরিবার তার বিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। তার পরিবার বিয়ের চাপ দিলেও সেই চাপের কাছে সে নত হয়নি। বিয়ে রুখে দিয়ে সে আরও উচ্চশিক্ষিত হয়ে ওঠে। এলাকায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের পাশে দাঁড়ায় সে। হাতেকলমে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে চায় সে। আজও সমানভাবে এলাকার অল্পবয়সিদের বিয়ে আটকানোয় সে যথেষ্ট তৎপর।”