• বিশ্বমঞ্চে কোচবিহারের কচ্ছপ যোদ্ধাদের গল্প ‘দ্য টার্টল ওয়ারিয়র্স’
    বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, দিনহাটা: কোচবিহারের বাণেশ্বরের শিবদিঘি ও আশপাশ অঞ্চলের কচ্ছপ রক্ষার সংগ্রাম এখন পৌঁছে গিয়েছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে। জেলা পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দ্য টার্টল ওয়ারিয়র্স’ ইতিমধ্যেই চারটি মর্যাদাপূর্ণ উৎসবে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে এবং একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও অর্জন করেছে। 

    সম্প্রতি ছবিটি মনোনীত হয়েছে কানাডার ক্যালগারি ইন্ডি ফিল্‌ম অ্যাওয়ার্ডস ও আন্তর্জাতিক কলকাতা শর্ট ফিল্‌ম উৎসবে। এর আগে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়েছিল ব্রিটেনের ফ্রোম আন্তর্জাতিক জলবায়ু চলচ্চিত্র উৎসব (Frome International climate film festival) ২০২৫-এ এবং পুরস্কৃত হয়েছে ইতালির পালের্মো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎস঩বে। কোচবিহারের মোহন রক্ষার সেই গল্পই আজ পৌঁছে গিয়েছে সুদূর কানাডা থেকে ইতালি পর্যন্ত, মন কেড়েছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকদের। 

    পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথাকে কেন্দ্রে রেখে নির্মিত এই তথ্যচিত্রের প্রেক্ষাপট বাণেশ্বরের শিবদিঘি ও আশপাশের এলাকা। বর্ষার মরশুমে বিপন্ন প্রজাতির ব্ল্যাক সফটশেল টার্টল, স্থানীয় ভাষায় যাদের বলা হয় ‘মোহন’, তাদের জীবনের লড়াই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। রাস্তা পেরতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার করুণ বাস্তবতা কিংবা তাদের রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবক, স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও পুলিসের সম্মিলিত প্রচেষ্টা—সবই উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে। 

    তথ্যচিত্রটিতে ‘মোহন রক্ষা কমিটি’র কার্যকলাপ, স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদ, পরিবেশবান্ধব শিক্ষার প্রচেষ্টা, কোচবিহারবাসীর আবেগ ও দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় এই তথ্যচিত্র ঘিরে এলাকায় এক অন্য আবহ তৈরি হয়েছে। 

    পুলিস সুপার বলেন, ‘দ্য টার্টল ওয়ারিয়র্স’ শুধুমাত্র একটি তথ্যচিত্র নয়, এটি প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানের কাহিনি। আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক স্বীকৃতি পাওয়া কোচবিহারবাসীর সম্মান। 

    পরিবেশবিদদের মতে, তথ্যচিত্রটি আগামী প্রজন্মকে সচেতন করবে এবং পরিবেশরক্ষায় অনুপ্রেরণা জোগাবে। স্থানীয়দের উদ্যোগ, পুলিস প্রশাসনের সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক স্তরের স্বীকৃতি, সব মিলিয়ে ‘দ্য টার্টল ওয়ারিয়র্স’ এখন কোচবিহারের গৌরবের প্রতীক। 

    এই তথ্যচিত্রে গান ও সুর দিয়েছেন নজরুল ইসলাম, ক্যামেরার কাজ করেছেন প্রশান্ত মহন্ত, সম্পাদনা করেছেন সুবিনয় বিশ্বাস, কণ্ঠস্বর দিয়েছেন বিপাশা মুরগ, বাঁশির সুর দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা দীপঙ্কর রায় ডাকুয়া। ত্রিশ মিনিটের তথ্যচিত্রটির প্রায় সব কলাকুশলীরই শিকড় উত্তরবঙ্গের মাটিতে, যা স্থানীয় মানুষকে আরও গর্বিত করেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)