বিনপুর -২ ব্লকের চাকাডোবায় ১০ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, রাজ্যের বরাদ্দ ১ কোটি
বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: বাসিন্দাদের দাবি মেনে এবার বিনপুর ২ ব্লকের চাকাডোবায় ১০ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হতে চলেছে। এজন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হবে। ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূবন চন্দ্র হাঁসদা এ খবর জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজ্য সরকারের কাছে বাঁশপাহাড়ীর চাকাডোবা এলাকায় প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ার জন্য ২০২৪ সালে জমি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ করা ১ কোটি টাকায় ভবন নির্মাণের কাজ হবে। এরপর ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলার কাজ করা হবে। বিনপুর -২ ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা চাকাডোবা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়ার খাতরা ও বেলপাহাড়ী এলাকায় যেতে হয়। গ্ৰামবাসীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বাঁশপাহাড়ী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের চাকাডোবা জনজাতি ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। চাকাডোবা থেকে বেলপাহাড়ী গ্ৰামীন হাসপাতালের দূরত্ব ২৫ কিমি। বাঁকুড়ার খাতড়ার দূরত্ব ৩৫ কিমি। গ্ৰামের মানুষ চিকিৎসার জন্য খাতড়ায় যান। বেলপাহাড়ী গ্ৰামীন হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হওয়ায় এলাকার মানুষ সেখানেও যাচ্ছেন। বেলপাহাড়ী বাজার থেকে পুরুলিয়া যাবার রাস্তা মসৃন। তবে যানবাহন চলাচল কম হওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যায় পড়তে হয়। গ্ৰামের গরিব মানুষদের দূরবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গাড়ি ভাড়া করতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা গ্ৰামেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছিলেন। দুই দশক আগে গ্ৰামটি ছিল মাওবাদী নিয়ন্ত্রিত এলাকা। মাওবাদীরা গ্ৰামের ফাঁকা জমিতে হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। ভবনটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ভিতরে গাছপালা ঝোপঝাড়ে ভর্তি। গ্ৰামের এক বাসিন্দা বলেন, সেই সময় এলাকায় কোনও হাসপাতাল ছিল না। মাওবাদীরা গ্ৰামবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা ও পাঁচটা করে ইট নিয়ে হাসপাতাল গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। রাজনৈতিক সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ায় সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গ্ৰামের সহজ সরল মানুষ রাজনীতির আবর্তে পড়ে গিয়েছিল। এখন অবশ্য এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে। হাসপাতালটি হলে চাকাডোবাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের উপকার হবে। বাঁশপাহাড়ী এলাকার বাসিন্দা গোলক সর্দার বলেন, বড় কিছু শারীরিক সমস্যা হলে বেলপাহাড়ী গ্ৰামীন হাসপাতাল থেকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে আমাদের খাতরায় যেতে হয়। এই এলাকায় যানবাহন বেশি চলে না। ধারদেনা করে গাড়ি ভাড়া নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। রাতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গড়ে তোলা হবে শুনছি। হাসপাতালটি হলে আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা মিটবে। অপর বাসিন্দা গুরুপদ দত্ত বলেন, এখানে একটা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে সমস্যা হয়। আমদের বেশিরভাগ সময় বেলপাহাড়ী কখনও খাতরায় যেতে হয়। এলাকায় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুবই প্রয়োজন। বিনপুর -২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশচন্দ্র সর্দার বলেন, বেলপাহাড়ী গ্ৰামীন হাসপাতালে নতুন করে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। খুব দ্রুত সার্জারি বিভাগটি চালু হয়ে যাবে। গ্ৰামীন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। চাকাডোবায় ১০ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা বেলপাহাড়ীতে আসতে হবে না। যানবাহন কম চলাচল করায় যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে।