শিক্ষিকার অভাবে বন্ধ দামোদরদত্তবাড় শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, ফের চালু করার দাবি
বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, কাঁথি: দু’বছর আগেও শিশুপড়ুয়াদের কলরোলে গমগম করত শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি। সেখানে এখন নিদারুণ শূন্যতা বিরাজ করছে। কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের বামুনিয়া পঞ্চায়েতের দামোদরদত্তবাড় শিশু শিক্ষা কেন্দ্র শিক্ষিকার অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটিতে তালা ঝুলছে। এলাকার শিশুদের যেখানে গ্রামেরই স্কুলে পড়াশোনা করার কথা ছিল, সেখানে তাদের এক কিলোমিটার দূরে স্কুলগুলিতে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামবাসী তথা অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। তাঁরা অবিলম্বে শিক্ষিকা নিয়োগ করে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি আগের মতো সচল এবং পঠনপাঠন শুরুর ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গ্রামে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এলাকার ছেলেমেয়েরা যাতে প্রাথমিক শিক্ষা পায়, তারজন্য গ্রামে একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত। ২০০০ সালে এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা হয়। শুরু থেকে দু’জন শিক্ষিকা ছিলেন। দীর্ঘ দু’দশকের বেশি সময় ধরে ভালোই চলছিল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি। বছর আড়াই আগে এক শিক্ষিকা অবসরগ্রহণ করেন। তার মাসছয়েক পর আরও একজন শিক্ষিকা অবসর নেন। তখন অন্য একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র থেকে এই শিক্ষাকেন্দ্রে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত করা হয় এক শিক্ষিকাকে। সেই সময় স্থানীয় একজন মহিলাকে শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। দু’জন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। এদিকে অন্য শিশুশিক্ষা কেন্দ্র থেকে নিযুক্ত শিক্ষিকাও কয়েকমাস পর অবসর নেন। এদিকে স্থানীয়ভাবে যুক্ত মহিলা কিছুদিন ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছিলেন। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সকলের সহযোগিতায় তাঁকে ন্যুনতম পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। তবে পরবর্তীকালে সেই বেতনও বন্ধ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত তিনিও আসা বন্ধ করে দেন। তারপরই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এলাকার ছেলেমেয়েরা এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পশ্চিম বামুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়ত আলাদারপুট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে। বুধবার ওই শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, দরজায় ও গেটে তালা ঝুলছে। চারদিক ফাঁকা। অথচ এখানে একটা সময় ছাত্রছাত্রীরা ছোটাছুটি করত, খেলে বেড়াত। শিশুপড়ুয়াদের কোলাহলে মুখর থাকত। কিন্তু সেই ছবি আর নেই। কবে সেই ছবি ফিরবে, তাও কেউ জানে না। স্থানীয় বাসিন্দা সুশীল দাস সহ অনেকেই বলেন, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি চালু থাকলে ছোট ছেলেমেয়েদের আর দূরবর্তী স্কুলে যেতে হতো না। তাদের এতদূর যেতে কষ্ট হয়। আমরা চাই, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি অবিলম্বে চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আগের মতো ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে গমগম করে উঠুক। এমএসকে অ্যান্ড এসএসকে টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি বিকাশ বারিক বলেন, শুধু দামোদরদত্তবাড় নয়, অনেক শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এভাবে শিক্ষিকার অভাবে ধুঁকছে। আমরা রাজ্য সরকারের শিক্ষাদপ্তরকে সমস্ত বিষয়ে জানিয়েছি। আসলে ২০১১ সাল থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। তাই নতুন করে শিক্ষিকা নিয়োগ হচ্ছে না। বিডিও শুভাশিস মজুমদার বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে এব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা দেখব।