নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মধ্যমগ্রামে রবীন্দ্র মঞ্চের কাছে আইইডি বিস্ফোরণে মৃত উত্তর প্রদেশের যুবক সচ্চিদানন্দ মিশ্র ‘স্পেশাল গিফ্ট’ পাঠানোর কথা বলেছিলেন প্রেমিকাকে। সেই গিফ্টের আড়ালে পার্সেল বোমা জাতীয় কিছু পাঠানো তার উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সম্পর্কের টানাপোড়েনে পাঁচ মাস গিফ্ট পাঠানো বন্ধ ছিল। হঠাৎ মাসখানেক আগে আইআইটি ফিটার বিশেষ উপহার পাঠানোর প্রসঙ্গ তোলায় এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে তাঁদের। সচ্চিদানন্দ পার্সেল বোমা তৈরির চেষ্টা করেছিল কি না, তা জানতে তার মোবাইলে থাকা ইউটিউব’ই ভরসা পুলিসের। সেখানে এই ধরনের কোনও বিষয়ে সার্চ করা হয়েছিল কি না, দেখা হচ্ছে।
সচ্চিদানন্দের গার্ল ফ্রেন্ড লালিমাকে (নাম পরিবর্তিত) দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে বেঙ্গল এসটিএফ। তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, কবে থেকে সচ্চিদানন্দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল, সে বিষয়ে। কথা প্রসঙ্গে লালিমা জানান, ইনস্টাগ্রামে কিছু আপলোড করলে তাতে লাইক ও কমেন্ট করত সচ্চিদানন্দ। সেখান থেকেই তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর নিয়ম করে প্রতি মাসে গিফ্ট পাঠাত হরিয়ানার একটি গ্লাস কারখানার ওই কর্মী। যার মধ্যে প্রসাধনী সামগ্রী, দামি জামাকাপড় থেকে শুরু করে নিত্যনতুন আইটেম থাকত। তিনি কোনও কিছু গিফ্টের আবদার করলে দু-একদিনের মধ্যে সেটি পৌঁছে যেত। ক্যুরিয়ারে করে হরিয়ানা থেতে গিফ্ট পাঠাত তাঁর প্রেমিক। প্রতি মাসে তাঁর মোবাইল রিচার্জ করে দেওয়ার পাশাপাশি হাতখরচও পাঠাত ওই যুবক। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলায় গিফ্ট ও হাতখরচ পাঠানো বন্ধ হয়।
লালিমা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, মাস খানেক আগে হঠাৎই উত্তরপ্রদেশের বাস্তির ওই যুবক ফোন করে কথা বলার সময় জানায়, অনেকদিন গিফ্ট পাঠাইনি, এবার স্পেশাল গিফ্ট পাঠাব। যদিও সে গিফ্ট আসেনি। তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, সচ্চিদানন্দের ওই কথাতেই। তাঁদের মাথায় আসে, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে মালদহের ইংলিশবাজারে পার্সেল বোমা বিস্ফোরণের কথা। এক স্কুল শিক্ষিকার নামে সেই পার্সেলটি পাঠিয়েছিল প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক। পার্সেল বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল শিক্ষিকার। তদন্তকারীদের সন্দেহ, এক্ষেত্রে সচ্চিদানন্দেরও সেরকম কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। গিফ্টের আড়ালে পার্সেল বোমা পাঠিয়ে লালিমার বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল তার। তদন্তকারীরা মনে করছেন, স্পেশাল গিফ্ট না আসায় ধারণা করা হচ্ছে,পরিকল্পনা বদল করে সশরীরে আইইইডি নিয়ে এসে বিস্ফোরণের ছক কষেছিল সচ্চিদানন্দ। তাই সচ্চিদানন্দের মোবাইল ঘেঁটে যাচাই করা হচ্ছে, পার্সেল বোমা বানানো সংক্রান্ত কোনও সার্চ করা হয়েছিল কি না!