• দেশের প্রথম জাতীয় পতাকা ‘দ্য ক্যালকাটা ফ্ল্যাগ’ উড়িয়ে ইতিহাস, নেই ফলক, অবহেলায় পড়ে রাজাবাজারের সাধনা পার্ক
    বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৫
  • অর্ক দে, কলকাতা: দেশের মধ্যে প্রথম বেসরকারিভাবে জাতীয় পতাকা তৈরি এবং উত্তোলন হয় কলকাতা শহরে। পতাকার নাম ‘দ্য ক্যালকাটা ফ্ল্যাগ’। সেই ইতিহাস অনেকেরই অজানা। যে জায়গায় পতাকা উত্তোলন হয়েছিল, সেই জায়গার ইতিহাসও অজানা। এমনকী যেখানে সেই পতাকা উত্তোলন হয়েছিল, সেখানেও সেই ইতিহাসের কোনও হদিশ মিলবে না।  পার্কের হালও অত্যন্ত খারাপ।  কোনও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বা আন্দোলন গড়ে তুলতে কোনও প্রতীকের প্রয়োজন পড়ে বলে মনে করেন গবেষকরা। সেই প্রয়োজন সম্ভবত প্রথম বোধ করেছিলেন এক বাঙালি শ্রীশচন্দ্র বসু। ১৮৮৩ সালে তিনি লাহোরে একটি মিছিল করেন। সেখানে ব্যবহার করেছিলেন সূর্যের প্রতীক দেওয়া একটি পতাকা। কিন্তু সেটি জাতীয় পতাকার মর্যাদা পায়নি।

    তারপর দেশের মধ্যে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে জাতীয় পতাকা তৈরি হল এই কলকাতায়। লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ চলছে তখন। দ্বিতীয় স্বদেশী আন্দোলনের সময় অনুশীলন সমিতির সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিলেন, একটি পতাকা ডিজাইন করা হবে। সেটি তাঁরা উত্তোলন করবেন। সেটিরই নাম এখন হয়ে গিয়েছে ‘দ্য ক্যালকাটা ফ্ল্যাগ’। পতাকা ডিজাইনের নেপথ্যে অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু এবং শ্রী অরবিন্দ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুকুমার মিত্রের অবদান আছে। অনেকে হেমচন্দ্র দাস কানুনগোর কথাও বলেন, যিনি বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন। সেই পতাকাটি অবশ্য বর্তমান জাতীয় পতাকার থেকে ছিল ভিন্ন।

    গোটা কাজটি হয় রাজাবাজার সংলগ্ন পার্সিবাগান অঞ্চলে। ফ্রান্সের পতাকার অনুকরণে ত্রিবর্ণরঞ্জিত ডিজাইন করা হয়। কিন্তু ঠিক কী রং ছিল তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। জনপ্রিয় মতটি হল, ফ্ল্যাগের উপরের অংশ গেরুয়া বা কমলা। মাঝখানের অংশ হলুদ। নীচের অংশ সবুজ। উপরে আটটি পদ্মফুলের মতো চিহ্ন। নীচে সবুজের একদিকে সূর্য, অন্যদিকে একফালি চাঁদ। সবমিলিয়ে সবধর্মের মিলনের প্রতীক। মাঝের হলুদ অংশে, দেবনাগরী হরফে লেখা ‘বন্দেমাতরম’। অন্য মতে, পতাকার উপরের অংশ সবুজ। মাঝখান হলুদ। নীচের অংশে লাল বা কমলা বা গেরুয়া রং।

    সেই পতাকা ১৯০৬ সালের ৭ আগস্ট উত্তোলন করেন অনুশীলন সমিতির প্রধান ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র। ইতিহাস অনুযায়ী, পার্সিবাগান সংলগ্ন গ্রিয়ার পার্কে সেটি তোলা হয়। কিন্তু এখন এমন কোনও পার্কের নাম আদৌ কি শোনা যায়? সেই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। ১৯০১ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রিচার্ড গ্রিয়ারের নামে ছিল এই পার্ক। স্বাধীনতার পর পার্কের নাম পাল্টে যায়। বর্তমানে সেটি সাধনা সরকার উদ্যান বলে পরিচিত। রাজাবাজারে ব্রাহ্ম গার্লস স্কুলের ঠিক পাশেই রয়েছে। এখন সকলে এটিকে ‘লেডিস পার্ক’ হিসেবে চেনে। 

    এই উদ্যানে যে এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, সেই সংক্রান্ত কোনও ফলক পর্যন্ত নেই। কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এমন ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজখবর করব। সবটা খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে সাধনা সরকার উদ্যানের হাল বেহাল। সর্বত্র আবর্জনা পড়ে রয়েছে। পার্কের ভিতর বা আশপাশে রয়েছে ময়লা ফেলার গাড়ি।
  • Link to this news (বর্তমান)