প্রয়াত হলেন সিপিএম নেতা দীনেশ ডাকুয়া, বাম জমানায় মন্ত্রী ছিলেন কোচবিহারের রাজবংশী নেতা
আনন্দবাজার | ২১ আগস্ট ২০২৫
প্রয়াত সিপিএম নেতা দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া। বুধবার সকালে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই ভুগছিলেন, চিকিৎসা চলছিল কলকাতার হাসপাতালে। সোমবার সকাল ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দীনেশ। ঘটনাচক্রে, রাজবংশী সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে তিনিই প্রথম রাজ্য মন্ত্রিসভায় প্রথম স্থান পেয়েছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে উত্তরবঙ্গের রাজনীতির একটি অধ্যায় সমাপ্ত হল বলেই মনে করছে কলকাতার মুজফ্ফর আহমেদ ভবন। স্বাধীনতার পর দীনেশ বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্র সংগঠন দিয়ে পথচলা শুরু হয় তাঁর। পাশাপাশি আইন পাশ করে মাথাভাঙাতেই ওকালতি শুরু করেন তিনি। উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে বরাবরই সক্রিয় ছিলেন। প্রথমে সিপিআই দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, ১৯৬৪ সালে সিপিআই (এম) দল গঠনের পর সেখানে যোগদান করেন উত্তরবঙ্গের এই নেতা। সিপিআই দলের হয়ে প্রথম বার ১৯৬২ সালের নির্বাচনে মাথাভাঙা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন তিনি, যদিও সেই প্রচেষ্টায় হার মানতে হয়েছিল তাঁকে। পরের বছর ১৯৬৩ সালে কোচবিহার লোকসভার উপনির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ভোটে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন।
সিপিএমে যোগদানের পর ১৯৬৭ সালে সেই মাথাভাঙা থেকেই প্রথম বারের জন্য বিধায়ক নির্বাচিত হন। যদিও ১৯৬৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এর পর ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সাফল্য পাননি দীনেশ। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলেন ডাকুয়া। ১৯৭২ থেকে টানা ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাথাভাঙার বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে তৃতীয় বার বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হলে জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভায় তফসিলি জাতি এবং উপজাতি সম্প্রদায় উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী হন। পরে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছিল।
২০০১ সালের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় তাঁকে পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাথাভাঙা থেকে দীনেশকে সরিয়ে সিপিএম প্রার্থী করে অনন্ত রায়কে। সেই সময় ডাকুয়ার অনুগামীরা অনন্তকে মাথাভাঙায় বহিরাগত বলে আক্রমণ করেছিলেন। সেই সময় দলের সঙ্গে দূরত্বও তৈরি হয়েছিল তাঁর। তবে কখনও সিপিএম ত্যাগ করেননি তিনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল দ্বিতীয় বার রাজ্যে ক্ষমতা দখল করলে তাঁর বাড়িতে হামলা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন দিনেশ।
দীনেশ মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছেন। তাঁর সিদ্ধান্তই মানতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে এ বিষয়ে তাঁর পুত্রের সঙ্গে কথা বলতে চান বিমান বসু ও মহম্মদ সেলিমেরা। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর মরদেহ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।