ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে গিয়ে চোদ্দো জন ‘ভূতুড়ে ভোটার’ এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি দেগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান রোজিফা খাতুনের। এলাকায় সেই ভোটারদের কোনও অস্তিত্ব নেই বলে দল ও প্রশাসনের কাছে তালিকা জমা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকে এসে এ দেশে বসবাসকারীদের বিষয়ে খোঁজ করে একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান প্রধান।
রোজিফা বলেন, ‘‘১২৩ নম্বর বুথে যে চোদ্দো জন ভোটারের নাম মিলেছে, বাস্তবে তাঁদের অস্তিত্ব না থাকলেও বেশ কয়েক জনকে পেয়েছি, যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসে অবৈধ উপায়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। আমরা সেই সব নাম দল ও প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।’’ পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন আগে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে পঞ্চায়েতের প্রধান ও অন্যান্য সদস্যদের ‘ভূতুড়ে ভোটার’ খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়। সূত্রের দাবি, যাঁরা গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন, তাঁদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশি ভোটারদের নাম এবং এলাকায় বসবাস করেন না, অথচ ভোটার তালিকায় নাম আছে— এ রকম দু’টি পৃথক তালিকা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির দাবি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আওতায় বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীরা এ দেশে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। অনেকেই ইতিমধ্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিতে তৃণমূল এই কাজ করছে। ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে তৃণমূল।
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রাজীব পোদ্দার বলেন, ‘‘দেগঙ্গা-সহ বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব দলের লোকেদের দিয়ে কিছু নাম প্রকাশ্যে আনছে, তালিকা থেকে বাদ দিতে। বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের বলব, আপনারা সিএএ-তে আবেদন করুন। কোনও ভয় পাবেন না। তৃণমূল ভোটে জেতার জন্য এই ছলচাতুরি শুরু করেছে।’’
অন্য দিকে, দেগঙ্গা ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য মফিদুল হক সাহজি ওরফে মিন্টু বলেন, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম আছে, অথচ এলাকায় কেউ চেনে না এবং বসবাস করে না— তাদের নাম বাদ দিতে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিজেপি জেতার জন্য ভোটার তালিকায় এই নাম ঢুকিয়েছে।’’
সিপিএম নেতা আহমেদ আলি খান আবার বলেন, ‘‘মৃত, ঠিকানা বদলকারী ও ভূতুড়ে নাম ভোটার তালিকায় না থাকার পক্ষে আমরাও। তবে কোনও নাগরিকের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে নই। বিজেপি ও তৃণমূলের নাম বাতিলের খেলায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের কয়েক জন ভোটার বলেন, ‘‘আমরা ২০-২৫ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ১০-১৫ বছর আগে ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে। অনেকে কাজের সূত্রে অন্যত্র থাকেন। তৃণমূলের কিছু নেতা আমাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের কাছে আর্জি, আমাদের নাগরিক স্বীকৃতি দিয়ে বাঁচান।’’