বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা এ রাজ্যে ফিরে এলে মাসিক ভাতা পাবেন বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বোলপুর শ্রীনিকেতন ব্লকের কসবা গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই তালিকায় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী থেকে শুরু করে দেওর, কসবা অঞ্চল তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়কের ছেলের নাম যেমন আছে, তেমনই আছে পরিযায়ী শ্রমিক নন, এমন অনেক ব্যক্তির নাম। এ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
সম্প্রতি কসবা পঞ্চায়েতের তরফে ৩৫২ জন পরিযায়ী শ্রমিকের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় লেখা, ‘এঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। তাই এঁদের মধ্যে যাঁদের জব কার্ড আছে, তাঁদের জব কার্ড ও আধার কার্ডের ফোটোকপি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবইয়ের ফোটোকপি ও ফোন নম্বর লিখে পঞ্চায়েতে জমা দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে’।
সেই তালিকায় কসবা পঞ্চায়েতের সদস্যা, বেড়গ্রামের বাসিন্দা মন্দিরা সাহার স্বামী অভিকান্ত সাহা, দেওর হিরন্ময় সাহা, কসবা অঞ্চল তৃণমূলের আহ্বায়ক বিকাশ মণ্ডলের ছেলে বুদ্ধদেব-সহ বেশ কিছু তৃণমূল কর্মীর নাম রয়েছে। কসবা পঞ্চায়েতের সদস্য আনারকলি বিবির স্বামী শেখ হাসানেরও নাম রয়েছে। অথচ হাসান দশ বছর আগেই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ ছেড়ে ফিরে এসেছেন বলে এলাকা সূত্রের খবর। অভিকান্ত সাহা বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে আমি আর আমার ভাই বেঙ্গালুরুতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলাম। বেশি দিন সেখানে ছিলাম না। ফিরে এসে আমি চাষবাসের কাজ শুরু করি, ভাই একটি লেদের কারখানা খোলে। এর পরে আর বাইরে কাজে যাইনি।’’ কী ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় নাম উঠল? অভিকান্তের দাবি, ‘‘আগে একবার নাম জমা দিয়েছিলাম। তার পরে কী হয়েছে বলতে পারব না।’’
অন্য দিকে, বুদ্ধদেব মণ্ডলের দাবি, তিনি ২০১৫ সালে হায়দরাবাদে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহায়কের কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিছুদিন থাকার পরে ফিরে আসেন। তারপর থেকে আর যাননি। তিনি বলেন, ‘‘নতুন করে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে আবেদনও করিনি। তাই কী ভাবে আমার নাম ওই তালিকায় এল, বলতে পরাব না।” কসবা পঞ্চায়েতের প্রধান নিমাই মুর্মুর আবার দাবি, “এই তালিকাটি মুখ্যমন্ত্রী নতুন শ্রমশ্রী প্রকল্প ঘোষণা করার আগেই প্রকাশ হয়েছে। তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা দুয়ারে সরকার শিবিরে আবেদন করেছিলেন। তার ভিত্তিতে নাম উঠেছে।’’
বোলপুর শ্রীনিকেতনের বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন তালিকার বিষয়ে আমার জানা নেই। শ্রম দফতরের কাছে জেনে বলতে পারব।’’ মহকুমাশাসক (বোলপুর) অয়ন নাথ বলেন, “এ রকম হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে, সংশ্লিষ্ট দফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।’’