বীরসিংহ: সিংহডাঙায় বর্ণপরিচয় তোরণের কাছে বসবে হাই মাস্ট। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটালে বন্যা পরিদর্শনে এসে বীরসিংহ মোড়ে (সিংহডাঙা) নেমেছিলেন। এরপরেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেখানে হাই মাস্ট বসানোর প্রস্তুতি শুরু হয় বলে খবর। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও বীরসিংহের বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য গত বছর দেড়-দুই ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা পথবাতিগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভও।
সারা বাংলা তথা দেশে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর জন্মস্থানের অনেক এলাকা দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। বছর চারেক আগে পূর্ত দফতর থেকে বীরসিংহ গ্রাম ছাড়াও লাগোয়া কাঁচিয়া, পাথরা, বোয়ালিয়ার একাংশ হয়ে হাই স্কুল পেরিয়ে গ্রামীণ হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত ৬৮০টি পথবাতি বসানো হয়েছিল। স্মৃতি মন্দির-সহ চারপাশের গোটা গ্রামে আলোয় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। তার মধ্যে কয়েকটি বাদ দিয়ে সবগুলিই এখন অকেজো। বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী কথা রেখেছেন। উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে দিয়েছেন। সেখানে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দও হচ্ছে। কিন্তু যে গ্রামের নামে পর্ষদ, সেখানে সমস্যা মেটাতে তেমন কোনও পদক্ষেপ হচ্ছে না কেন! উন্নয়ন নিয়ে পর্ষদ পক্ষপাতিত্ব করছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিদ্যাসাগরের গ্রামের অন্ধকার ঘোচাতে প্রশাসনের উদ্যোগে ওই পথবাতিগুলি বসানো হয়েছিল। সেই সময় উন্নয়নের দাবিতে সরব হয়েছিলেন বীরসিংহের বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসনের তরফে আলো ছাড়াও রাস্তা ও পানীয় জলের উপরে জোর দেওয়া হয়। তারপর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দুশো বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বীরসিংহে এসে একাধিক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গঠিত হয় বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ। যদিও তারপরে পথ বাতিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। সেগুলি সারানোর খবরও নেই। এর মধ্যেই সিংহডাঙার মোড়ে বর্ণপরিচয় তোরণের কাছে হাই মাস্ট আলো বসানোর সিদ্ধান্ত।
ওই তোরণের উদ্বোধন হয়েছিল বছর খানেক আগে। তা নিয়ে আবেগে মেতে উঠেছিলেন ঘাটালবাসী। মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছিল সেই গেটের ছবি। সূত্রের খবর, সিংহডাঙ্গায় মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রশান্ত রায় বর্ণপরিচয় তোরণে আলো বসানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। এরপরই জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির উদ্যোগে হাই মাস্ট বসানোর তৎপরতা শুরু হয়। সেখানে হাই মাস্ট আলো জেলা প্রশাসনের তরফে বসানো হলেও তার বিদ্যুৎ খরচ অবশ্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বহন করবেন। এই নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বীরসিংহের রাস্তায় থাকা পথবাতিগুলির বিদ্যুৎ বিল না মেটানোর জন্যই সেগুলির আলো একে একে নিভে গিয়েছিল বলে খবর। সেই বিদ্যুৎ বিল কে মেটাবে না নিয়ে এখনও টানাপড়েন রয়েছে। তারপরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব তো আছেই। এক্ষেত্রেও তেমন হবে না তো! প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়দের অনেকে।
ক্ষোভ রয়েছে রাস্তা তৈরি নিয়েও। বীরসিংহের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় যা রাস্তা তৈরি হচ্ছে তার সিংহভাগই ঘাটাল ব্লকের দু’একটি পঞ্চায়েতে। যে এলাকার নামে পর্ষদের নাম সেখানেই রাস্তা সংস্কার নিয়ে তৎপরতা নেই পর্ষদের। মহকুমাশাসক তথা পর্ষদের মেম্বার সেক্রেটারি সুমন বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “বীরসিংহের আলো নিয়ে সমস্যা আছে। তবে রাস্তা-সহ উন্নয়ন নিয়ে কোনও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ঠিক নয়।”