স্থায়ী উপাচার্য আসার পরে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন আয়োজিত হয় গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহে। তবে এ দিন সমাবর্তনে ছিলেন না আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। অনুষ্ঠানে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠেন ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন। এ বার কোনও ডি.লিট উপাধি দেওয়া হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে সমাবর্তনে ডাকা হয়নি, এমন দাবি করে এ দিন একাধিক ছাত্রছাত্রী সমাজ মাধ্যমে সরব হন।
সমাবর্তনে এ দিন প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের প্রাক্তন সার্ভেয়ার জেনারেল পৃথ্বীশ নাগ। দীক্ষান্ত ভাষণে তিনি নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার নাথ, রেজিস্ট্রার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন পরে এ বার চার জনকে ডিএসসি সম্মান দেওয়া হয়— ভি নারায়ণন, পদ্মানাভন বলরাম, শ্যামাসিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবীপ্রসাদ শেঠি। তবে চিকিৎসক শেঠি সমাবর্তনে অনুপস্থিত ছিলেন।
ইসরোর চেয়ারম্যান নারায়ণন বলেন, ‘‘আরও বেশি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে মহাকাশ প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে কাজে লাগাবে ইসরো।’’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দিশা-নির্দেশ অনুযায়ী এগিয়ে যাবে তাঁদের প্রতিষ্ঠান। মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে শামিল করা হচ্ছে। মহাকাশ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বাজারের দু’শতাংশ এখন ইসরোর আওতায় রয়েছে। তা ৮-১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া লক্ষ্য। ইসরোর ৫৫টি মহাকাশযান এখন কক্ষপথে রয়েছে। এই সংখ্যা দু’-তিন বছরের মধ্যে তিন গুণ বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
ইসরোর চেয়ারম্যান এ দিন আরও জানান, মহাকাশযান উৎক্ষেপণে দেশি প্রযুক্তির আরও বেশি ব্যবহার তাঁদের লক্ষ্য। ২০২৭ সাল নাগাদ ইসরো মানব মহাকাশযান পাঠাবে বহির্বিশ্বে। ২০৩৫ সাল নাগাদ গড়ে তোলা হবে ভারতের নিজস্ব ‘স্পেস স্টেশন’। চন্দ্রযান ৪-এর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। এই অভিযানের মাধ্যমে চাঁদ থেকে নমুনা নিয়ে আসা হবে পৃথিবীতে। চন্দ্রযান ৫-এর রূপায়ণে জাপানের সঙ্গে অংশীদারি ভিত্তিতে কাজ হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চন্দ্রযান ৪ প্রকল্প হবে, আমরাচাঁদে অবতরণ করে নিরাপদেফিরিয়ে আনব। আমরা একটি রকেট তৈরি করছি।’’ মহাকাশ গবেষণানিয়ে আরও নানা পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশেষ কারণে আচার্য আজ আসতে পারেননি। মঙ্গলবার রাতে তিনি তা আমাদের জানিয়েছেন।’’ রেজিস্ট্রার অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৪১২ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ মান প্রাপক এবং স্নাতক স্তরে সর্বোচ্চ মান প্রাপকদের সম্মানিত করা হয়।’’
এ দিনই একাধিক পড়ুয়া সমাজ মাধ্যমে দাবি করেন, সমাবর্তনে ডাক পাওয়ার কথা থাকলেও, তাঁদের ডাকা হয়নি। অনিরুদ্ধ আধিকারী নামে এক ছাত্রের অভিযোগ, তাঁর স্বর্ণপদক পাওয়ার কথা। কিন্তু বুধবার সমাবর্তনের কথা তাঁকে আগেজানানো হয়নি। সকালে সে খবরপেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁকে জানানো হয়, তিনি যতক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছবেন, তখন সব অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে। তাতে ক্ষুব্ধ ওই ছাত্র সমাজ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, কী হয়েছে, খোঁজ নেওয়া হবে। এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে, আলাদা ভাবে ডেকে উপাচার্যের হাত দিয়ে শংসাপত্র তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।