শিরে সংক্রান্তির জন্য বসে না-থেকে হাতে সময় থাকতে আসন-রফার সিদ্ধান্ত সেরে ফেলা হোক। জেলায় জেলায় স্থানীয় দাবিতে আন্দোলন করলে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সেই আন্দোলন জোরালো করা হোক। এই জোড়া দাবিই উঠে এল সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে বাম শরিকদের মধ্যে আসন ভাগের প্রশ্নে মঙ্গলবার আলোচনা হয়ছিল বামফ্রন্টে। তার পরে বুধবার থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে শুরু হয়েছে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। উপস্থিত আছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি। সূত্রের খবর, নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রস্ততি নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে প্রারম্ভিক ভাষণে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, অন্য কোনও দলকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে ধরে নিয়ে কোনও আসনে যেন দলের নেতা-কর্মীরা গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে বসে না থাকেন। আন্দোলন এবং সংগঠনের কাজ সর্বত্রই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার পরে একাধিক জেলার প্রতিনিধিরাই আর্জি জানিয়েছেন, আসন সমঝোতার বিষয়ে যত দ্রুত সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, তত ভাল। কারণ, শেষ মুহূর্তে ভাগাভাগি করতে গিয়ে গত কয়েকটি নির্বাচনে বিপাকে পড়তে হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলা থেকে আবার বলা হয়েছে, সমঝোতা হলে বাম ভোট যে ভাবে কংগ্রেসের বাক্সে যায়, উল্টোটা সে ভাবে হয় না— অভিজ্ঞতা অন্তত এমনই বলছে।
রাজ্যের মোট বিধানসভা আসনকে ‘সম্ভাবনা’র বিচারে তিন ভাগে ভাগ করে জেলাগুলির কাছে আগেই রিপোর্ট চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। সূত্রের খবর, লড়াই করার ইতিবাচক সম্ভানা আছে, এই নিরিখে প্রথম তালিকায় প্রায় ৬৫টি আসনের তালিকা এসেছে। তার মধ্যে আছে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান পূর্ব, বীরভূমের মতো জেলার কিছু আসন। পরবর্তী স্তরে আরও প্রায় ৮৫টি আসনকে ধরা হয়েছে। রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতা করে সিপিএম নিজের প্রতীকে ১৩৭টি আসনে লড়েছিল। এ বার অন্তত ১৫০টি আসনকে আগে থেকে চিহ্নিত করে প্রস্তুতিতে বাড়তি নজর দিতে চাইছে তারা। অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে তখন আবার সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনে হুগলি, বর্ধমান পূর্ব ও পশ্চিম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ বেশ কিছু জেলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, জল জমা, বেহাল রাস্তা, ট্রেনেকর স্টপেজ দেওয়ার দাবি এবং সর্বোপরি ১০০ দিনের কাজ ফের চালু করার দাবিতে আন্দোলনে মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি যখন অনুপ্রবেশ এবং হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময়ে স্থানীয় প্রশ্নে বামেদের ময়দানে থাকা উচিত বলেই মত উঠে এসেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় দাবিতে আন্দোলন করে সংগঠনকে সচল রাখতে পারলে ভোটের প্রস্তুতিতেও সুবিধা হবে।’’