• জোড়া মৃত্যুর নেপথ্যে কি খালের বেহাল দশাও, প্রশ্ন স্থানীয়দের
    আনন্দবাজার | ২১ আগস্ট ২০২৫
  • তিরতির করে বইছে কালো জল। সেই জলের নীচে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পাঁকের স্তর। খালের বিভিন্ন অংশে পাঁক-সহ নানাবিধআবর্জনা জমে রয়েছে। অভিযোগ, অনেক বছর ধরে খালের ওই অংশে সংস্কারের কোনও কাজ হয়নি। আনন্দপুরে ওই খাল থেকে এক তরুণ ও এক তরুণীর দেহ উদ্ধারের পরে তাই স্থানীয়েরা প্রশ্ন তুলছেন, একসঙ্গে দু’টি তরতাজা প্রাণ চলে যাওয়ার পিছনে খালের এমন বেহাল দশাও কি একটি কারণ?

    কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে টালিগঞ্জ পঞ্চান্নগ্রাম (টিপি) খাল। সেই খালেরইএকটি অংশ গিয়েছে আনন্দপুরের কাছে চিনা মন্দির এলাকার মধ্যে দিয়ে। মঙ্গলবার সেই খাল থেকে উদ্ধার হয় রোহিত আগরওয়াল এবং রণিতা বৈদ্য নামে দুই তরুণ-তরুণীর দেহ। তার মধ্যে রণিতার দেহ খানিকটা দূরে ভেসে যায় এবং রোহিতের দেহ পাঁকে আটকে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

    বুধবার চিনা মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এমন আশ্চর্যজনক মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও।একসঙ্গে দু’জনের এ ভাবে খালে ডুবে মৃত্যুর ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। হতবাক বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে ওই এলাকার খালের কোনও সংস্কার হয়নি। খাল কেটে পলিও তোলা হয়নি। ফলে, খালের জল সেখানে কার্যত প্রবাহ-শূন্য। অনেকেই মনে করছেন, পাঁকের গভীরতার কারণে ওই তরুণ-তরুণী খালে পড়ার পরে পাঁকে ডুবে দম আটকে মারা গিয়েছেন।

    সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে খালের এমন দুরবস্থার কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। অবশ্যই খালটির কী অবস্থা, তা নিয়ে খোঁজ নেব। যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হবে।’’

    পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে প্রথমে ওই তরুণীচিনামন্দির এলাকার ওই খালে পড়ে যান। তাঁকে বাঁচাতে খালে ঝাঁপ দেন তরুণও। কিন্তু তার পরে দীর্ঘক্ষণ তাঁরা নিখোঁজ ছিলেন। যা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চাঞ্চল্য তৈরি হয়। শেষে ওই দিন দুপুরেরপরে খাল থেকেই উদ্ধার হয় দু’জনের দেহ। দেহ উদ্ধার করতে নেমে পাঁকের কারণে উদ্ধারকাজ দীর্ঘসময় ব্যাহত হয় বলেও জানিয়েছেন ডুবুরিরা।

    স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষের কথায়, ‘‘খাল সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে একাধিক বার চিঠি দিয়েছি। খানিকটা অংশেকাজ হয়েছে। কিন্তু ওই জায়গাটিতে খালপাড়ে বসতির কারণেঠিক মতো খাল সংস্কারের কাজ করা যায়নি।’’

    কলকাতার বহু খালের মতো চিনা মন্দির এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া টিপি খালের ওই অংশের পাড়ও দখল হয়ে রয়েছে বহু বছর ধরে। সেই সব বস্তি থেকে নানাবিধ আবর্জনা খালের জলে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, প্লাস্টিক, থার্মোকল-সহ নানা বর্জ্য খালে পড়েরয়েছে। মজে যাওয়া খালটি থেকে সব সময়ে দুর্গন্ধও বেরোয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)