খিদিরপুরের কার্ল মার্ক্স সরণিতে ৮ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে আটতলা ‘আর্বান কমিউনিটি হেল্থ সেন্টার’ (ইউসিএইচসি)। কলকাতা পুরসভার সেন্ট্রাল অডিট দফতরের প্রতিনিধিরা গত বছরের ২২ অগস্ট ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করে অবাক হয়ে যান। কেন্দ্রীয় অডিট দফতরের তরফে পুরসভার কাছে ভবন নির্মাণের অসঙ্গতির কারণ জানতে চাইলে সম্প্রতি উত্তর পেয়েছেন তাঁরা। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তরফে দিনকয়েক আগে কেন্দ্রীয় অডিট দফতরকে উত্তরে জানানো হয়েছে, ঊর্ধ্বতন বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী জনগণের স্বার্থে হাসপাতাল ভবন তৈরি হয়েছে।
পুরসভার কেন্দ্রীয় অডিট রিপোর্টে সাফ জানানো হয়েছে, হাসপাতাল ভবন নির্মাণে পুরসভার বিল্ডিং আইন (২০০৯)-এর একাধিক নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। দমকলের অনুমোদন নেই। যা থেকে জনগণের স্বার্থে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
কলকাতা পুরসভার কেন্দ্রীয় অডিটর তাঁর রিপোর্টে বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘‘খোদ কলকাতা পুরসভার নিজের ভবন নিয়ম বিরুদ্ধ ভাবে তৈরি হওয়ায় এবং সে নিয়ে পুরসভার তেমন কোনও সদর্থক ভূমিকা না থাকায় জনমানসে বিরূপ বার্তা যেতে পারে। এমন সংস্থা কী করে অন্যের দোষ ধরবে, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে।’’
কেন্দ্রীয় অডিট রিপোর্ট জানিয়েছে, নিয়মানুযায়ী ২৭.২৫ মিটার উচ্চতার হাসপাতাল বাড়ির জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কম ছাড় দেওয়ায় আলো, হাওয়া কম পড়বে।আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটবে। রিপোর্টে আরও রয়েছে, পুরসভার বিল্ডিং আইনের ৬৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, রাস্তা কত চওড়া থাকলে কতটা জায়গায় নির্মাণ করা যাবে, সেটা বলা আছে। যেটাকে এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও)বলা হয়। হাসপাতাল ভবন নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ধরে কমবেশি ১৩২১ বর্গমিটার আয়তন নির্মাণ হওয়ার কথা।কিন্তু বাস্তবে নির্মাণ করা হয়েছে ২২২৪ বর্গমিটার। অর্থাৎ, অতিরিক্ত ৯০৩ বর্গমিটার নির্মাণকাজ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় অডিট রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, পুর বিল্ডিং আইনের ৭০ নম্বর ধারায় জমির কতটা অংশে নির্মাণ করা যায়, আর কতটা অংশ ফাঁকা রাখতে হয়, তা বলা আছে। হাসপাতালের ক্ষেত্রে জমির ৪০ শতাংশে বাড়ি করা যায় আর ৬০ শতাংশের মতো জমি ফাঁকা রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায় ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে।
এর ফলে বাধ্যতামূলক ছাড় কম পড়েছে। আপৎকালীন অবস্থায় যাতায়াতে অসুবিধা হবে। হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবার ভবনের ক্ষেত্রে যা খুব বিপজ্জনক। কেন্দ্রীয় অডিটর রিপোর্টে জানাচ্ছেন, যে কোনও বাড়িতে সিঁড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একতলায় সঙ্কীর্ণ সিঁড়িআপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিপজ্জনক হতে পারে।
রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ওই হাসপাতাল ভবন নির্মাণে দমকলের অনুমোদন ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বৈধ ছিল। তার পরে দমকল দফতর থেকে কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিষয়টি বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
এই সব অনিয়মের কারণ জানতে কলকাতা পুরসভার কমিশনারকে গত বছরে চিঠি দিয়েছিলেন পুরসভার কেন্দ্রীয় অডিটর। সম্প্রতি পুরসভার তরফে উত্তর এসেছে অডিট দফতরে। নিজেদের বিল্ডিং আইনের একাধিক নিয়ম ভাঙা সত্ত্বেও পুরসভার তরফে দেওয়া উত্তরে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় অডিটর।
কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা এ বিষয়ে বুধবার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অডিট দফতরের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুরসভার তরফে ইতিমধ্যে জবাব দেওয়া হয়েছে। আমাদের উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফের আমাদের জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’