• বান্ধবী যোগাযোগ কমাতেই মরিয়া হয়ে বিস্ফোরণ-ছক
    এই সময় | ২১ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়, মধ্যমগ্রাম: ফেসবুকে আলাপ থেকে ইনস্টাগ্রামে মধ্যমগ্রামের গৃহবধূ নীলিমা গাজির সঙ্গে প্রেমালাপ চলছিল উত্তরপ্রদেশের যুবক সচ্চিদানন্দ মিশ্রর। কিন্তু বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে দাম্পত্য অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকেই সচ্চিদানন্দর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন ওই মহিলা। সেই কারণেই সচ্চিদানন্দ আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কোনও অঘটন ঘটাতে চেয়েছিলেন বলে ওই মহিলাকে জেরায় জানতে পেরেছেন এসটিএফের কর্তারা।

    মধ্যমগ্রামের প্রাণঘাতী বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নাকি অন্য কোনও বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা নিশ্চিত হতে তদন্তের স্বার্থে মৃত যুবকের বাড়ি উত্তরপ্রদেশ এবং তাঁর কর্মস্থল হরিয়ানার বাহাদুরগড়ে পৌঁছেছেন তদন্তকারীরা।

    ঘটনার পর মৃতের প্রেমিকা এবং তাঁর স্বামীকে কলকাতায় একদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে মধ্যমগ্রামে এসেও ওই দম্পতি মধ্যমগ্রাম পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়ার ভাড়া বাড়িতে আসেননি। আছেন নীলিমার স্বামী শফিকুল গাজির দিদির বাড়িতে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এসটিএফকে নীলিমা বলেন, সচ্চিদানন্দের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে স্বামী তাঁকে বুঝিয়েছিলেন। অশান্তিও হয়েছিল স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে। তাই সম্পর্ক থেকে তিনি সম্প্রতি বেরিয়ে আসেন। কিন্তু সেটা মানতে চাইছিলেন না সচ্চিদানন্দ। প্রেমিকাকে বারবার ফোন করতেন ওই যুবক।

    মরিয়া হয়ে সম্ভবত তৃতীয়বার মধ্যমগ্রামে এসে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবক। এ নিয়ে নীলিমার ননদ আগাম অশান্তির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিল। পুলিশের অনুমান, হামলা চালানোর আগেই রবিবার মাঝরাতে মধ্যমগ্রাম বয়েজ হাইস্কুল লাগোয়া রবীন্দ্র মুক্তমঞ্চে বসে সেই আইইডি নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় অসাবধানতায় সেটির বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তাঁর।

    এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন নীলিমার বাবাও। জোহান এক্কা নামে ওই প্রৌঢ় বুধবার দাসপাড়ার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মাত্র ২৫ বছরের ছেলেটার যেভাবে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে, সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। কিন্তু ওই ছেলেটার জন্যই তো আমার মেয়ের সংসারে অশান্তি হতো। অশান্তির জন্য আমার বাড়িতে চলে আসত মেয়ে। জামাই এসে অশান্তি করত আমার বাড়িতে। যাকে নিয়ে অশান্তি, সেই যখন মারা গেল, তখন আর অশান্তি হবে না মেয়ে জামাইয়ের সংসারে।’

    তাদের ১৫ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। তা সত্বেও স্ত্রীর এই প্রেমপর্ব মানতে না পারায় শুরু হয় দাম্পত্য অশান্তি। মাঝেমধ্যেই ভিন রাজ্যের ওই প্রেমিককে নিয়ে মধ্যমগ্রামের দাসপাড়ার ভাড়া বাড়িতে তুমুল অশান্তি হত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। লাগোয়া বাপের বাড়ি হওয়ায় মেয়ে জামাইয়ের অশান্তির আঁচ এসে পড়ত জোহানের পরিবারেও। মাস দুই আগে সচ্চিদানন্দ প্রেমিকার বাড়িতে এসে দু'দিন ছিল।

    প্রেমিকের আসা এবং স্ত্রীর সঙ্গে ভিন রাজ্যের ওই যুবকের প্রেমপর্বের গোটা বিষয়টি শ্বশুড় এবং শাশুড়ি জানে ধরে নিয়েই শফিকুল তুমুল অশান্তি বাধিয়েছিলেন।এই অশান্তির মধ্যে একবার স্ত্রী এবং ছেলেকে ছেড়ে শফিকুল তাঁর দিদির বাড়িতে গিয়েও থেকেছিলেন।নীলিমাও ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ছিলেন।ফলে মেয়ে জামাইয়ের লাগাতার অশান্তির কারণে দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয়েছে জোহানের পরিবারকে।

    এদিকে,এই প্রেমের এই সম্পর্কে পথের কাটা প্রেমিকার স্বামীকে দুনিয়া থেকে সরাতেই আই ই ডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওড়াতে চেয়েছিল আই টি আই ফিটার প্রেমিক সচ্চিদানন্দ। ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস নিয়ে মধ্যমগ্রামে গত ১৬ আগষ্ট হাজির হন সচ্চিদানন্দ।কিন্ত প্রেমিকার স্বামীকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়ার আগে মধ্যমগ্রামের ফ্লাই ওভারের নীচে রবীন্দ্র মুক্তমঞ্চে বসে নাড়াচাড়া করার সময় ভুল বোতামে চাপ পড়ে যাওয়ায় নিজের হাতে তৈরি আই ই ডি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় প্রেমিকের।

    মেয়ের প্রেমিকের মৃত্যুর তিনদিন পর বুধবার দাসপাড়ার বাড়িতে দাড়িয়েই জোহান বলেন, ছেলেটির মৃত্যুর জন্য একজন বাবা হিসেবে খুব খারাপ লাগছে। ওর পরিবারের জন্যও খারাপ লাগছে। কিন্তু ওই ছেলেটার জন্য আমার মেয়ের সংসারে এবং আমার সংসারেও যেভাবে অশান্তি হত,সেটা আর সহ্য হচ্ছিল না। সেদিক থেকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত লাগছে। মেয়ের বিয়েতে অমত থাকলেও ওরা এবার সুখে থাকুক, এটাই চাই।

  • Link to this news (এই সময়)