• খাস কলকাতায় বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে মারধর! আক্রান্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পড়ুয়া, ভর্তি হাসপাতালে ...
    আজকাল | ২১ আগস্ট ২০২৫
  • গোপাল সাহা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রের উপর হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরে। অভিযোগ, ‘বাংলাদেশি’ বলে অপবাদ দিয়ে শিয়ালদহ ব্রিজের নিচে একদল হিন্দিভাষী ব্যবসায়ী তাঁদেরকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চারজন ছাত্র বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। এই ঘটনায় মুচিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তারের খবর নেই।

    কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?

    জানা গেছে, বুধবার রাতের দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হোস্টেলের এক ছাত্র প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে শিয়ালদহ ব্রিজের নিচে একটি মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকানে যান। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় দাম নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। ওই ছাত্রের অভিযোগ, বিক্রেতা হিন্দিভাষী ছিলেন এবং তিনি হিন্দিতে গালিগালাজ করার পাশাপাশি বাংলা বলার কারণে ছাত্রকে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করে হেনস্থা করেন।

    পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ছাত্রটি হোস্টেলে ফিরে গিয়ে কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে পুনরায় দোকানে যান। তখন আশপাশের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী জড়ো হয়ে তাঁদের উপর চড়াও হয়। ছাত্রদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের হাতে ধারালো অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। হঠাৎ অতর্কিত এই হামলায় চারজন ছাত্র আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তাঁদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। 

    থানায় অভিযোগ, বিক্ষোভে উত্তাল ছাত্রসমাজ

    আহতদের চিকিৎসার পর অন্যান্য ছাত্ররা মুচিপাড়া থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে তাঁরা থানার বাইরে বসে বিক্ষোভ দেখান এবং অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। ঘটনাস্থলে পৌঁছন বাংলা পক্ষের মুখপাত্র গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

    পুলিশের বক্তব্য

    মুচিপাড়া থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।

    বৃহত্তর প্রশ্ন তুলছে এই ঘটনা

    এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফের প্রশ্ন উঠছে—শহরের ভিতরেই যদি বাংলা ভাষাভাষীদের এভাবে ‘বিদেশি’ বলে অপমান ও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, তাহলে ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের শহর হিসেবে কলকাতার পরিচয় কোথায় দাঁড়ায়? ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।  

    এই ঘটনায় আক্রান্ত ছাত্ররা এবং উপস্থিত গর্ব চট্টোপাধ্যায় যা বলেন :

    আক্রান্ত পড়ুয়া বলেন, 'হিন্দিতে বলছে, বাংলাদেশি বলব। কী করবি বল? কী করার আছে কর। এরপর আমায় মারল। আমার মোবাইল কেড়ে নিল। আমাদের একটা ছেলেকে আটকেও রেখেছিল।' আক্রান্ত ছাত্রের বন্ধু বলেন, 'আমাদের হস্টেলের কিছু ছেলে মোবাইলের কভার কিনতে যায়। তখন একটা লোক আমাদের বাংলাদেশি বলে আখ্যা দেয়। তার জন্য আমরা প্রতিবাদ করি। সেই কারণে, ছুরি-বন্দুক দিয়ে আঘাত করে আমাদের।' 

    গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'আমরা গুজরাটে মার খাব, রাজস্থানে মার খাব, এখন কলকাতাতেও মার খাব? মানলাম ওড়িশায় বিজেপি সরকার, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার আছে। কলকাতায় তো বিজেপি নেই। তাহলে এই অপরাধীগুলো কেন গ্রেপ্তার হবে না?'

    অপরদিকে স্থানীয় দোকানদাররা অভিযোগ তুলেছে, ছাত্ররা তাদের দোকানপাট ভাঙচুর করে তছনছ করে দিয়েছে। ব্যবসা করতে বসে তাদের এ ধরনের ঘটনায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

    ঘটনাটি নিছক বচসা না হয়ে কোনও বিদ্বেষপ্রসূত উদ্দেশ্যের ফল কিনা, তা নিয়েও তদন্তে নেমেছে পুলিশ। শহরের বুকে এ ধরনের ঘটনা ফের যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফে সক্রিয় পদক্ষেপের দাবিতে সরব হয়েছে ছাত্রসমাজ ও নাগরিক মহল।

    ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা, ভাষাগত অধিকার এবং ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থাকে সম্মান জানিয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার দাবিতে জোরালো আওয়াজ উঠছে। তদন্ত কোন দিকে এগোয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেদিকে এখন নজর প্রশাসনের। পুলিশ সূত্রে খবর পুলিশ তদন্ত করে দেখছে ঘটনার নেপথ্যে আসলে কি ঘটেছিল।
  • Link to this news (আজকাল)