বরুণ সেনগুপ্ত ও বিক্রম দাস: ভিন রাজ্য নয় এবার খোদ বাংলা। বাংলা বলায় বাংলাদেশি বলে শিয়ালদহে বেধড়ক মারধর করা হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়াকে। গতকাল রাতের ঘটনা। অভিযোগ, পড়ুয়াদের উপরে আক্রমণ করেন শিয়ালদহ ব্রিজের নীচের কিছু দোকানদার। জানা যাচ্ছে আক্রান্ত পড়ুয়ারা শিয়ালদহের কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিক। আক্রান্ত ছাত্ররা মুচিপাড়া থানায় গিয়ে বিক্ষোভে দেখান।
বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট-সহ একাধিক রাজ্যে ওই ঘটনা ঘটছে। বহু বাঙালিকে বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়াও হয়েছে।
কী হয়েছিল শিয়ালদহে? বুধবার রাত দশটা নাগাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হস্টেলের এক ছাত্র শিয়ালদহ ব্রিজের নীচের একটি দোকানে মোবাইলের ব্যাককভার কিনতে যান। দরকষাকষি নিয়ে এক দোকানদারের সঙ্গে ওই পড়ুয়ার কথাকাটাকাটি হয়। অভিযোগ, বাংলায় কথা বলায় হিন্দিভাষী বিক্রেতা ওই পড়ুয়াকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা বলে তার উপরে চড়াও হয়। প্রবল গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ।
ওই ঘটনার পর ওই পড়ুয়া হস্টেলে ফিরে যান ও সহপাঠীদের নিয়ে ওই দোকানে এলে আসপাশের ব্যবসায়ীরা ওই ছাত্রদের উপরে চড়াও হয় ও প্রবল মারধর করে। অভিযুক্তদের কাছে ধারাল অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের। আহতদের কলকাতা মেডিক্যালে প্রাথমিক চিকিত্সা করানো হয়। এরপর তারা মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানার বাইরে বসে বিক্ষোভ দেখান।
আক্রান্ত এক পড়ুয়া বলেন, এক হিন্দিভাষী ব্যবসায়ী এসে বলেন, হ্যাঁ বাংলাদেশি বলেছি। কী করবি বল! এই ঘটনা যখন ভিডিয়ো করছিলাম তখন আমাদের চারজনকে মাটিতে ফেলে মারে ব্যবসায়ীরা। এর পর ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিয়ো ডিলিট করতে বাধ্য় করে। হামলাকারীদের কারও হাতে হকিস্টিক, করাও হাতে ছুরি ছিল। অন্য এক পড়ুয়া বলেন, হকিস্টিক দিয়ে মাথায় মারা হয়েছে। ছুরি মারতে গিয়েছিল। হাত দিয়ে ধরে ফেলি।
এখনো পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনও আটক বা গ্রেফতার হয়নি। পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, কাল অনেক রাতে এই ঘটনা ঘটে। বারোটার পর পড়ুয়ারা মুচিপাড়া থানায় এসে উপস্থিত হন। এরপর ভোর চারটে পর্যন্ত তাদের যে বয়ান রেকর্ড করা হয়। যেহেতু রাতে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তাই এখনো পর্যন্ত কোন দোকানের ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্ত করছে পুলিস।
ওই ঘটনা নিয়ে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, শিয়ালদহ রেলব্রিজ থেকে তিন চারশো মিটার দূরে থাকি। ওখানে খুব বেশি হিন্দিভাষী কেউ নেই। ওখানে যদি বলা হয় বাংলা কেন বলছিস, হিন্দি বল। তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এখন হস্টেলের ছেলেরা যদি বোঝে বাংলা-বাঙালি নিয়ে বাজার গরম আছে, সরকার বাংলার পক্ষে তাহলে তারা যদি এই কথাটাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে সেটাও দুর্ভগ্যজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।