গায়ে কিলবিল করছে সূচ, মানব শরীর না সূচের কারখানা? অবাক করা ঘটনা!...
আজকাল | ২২ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবাক হওয়ার মতো কান্ডই বটে! জীবন্ত মানুষের শরীরে অসংখ্য সূচ। শরীরের মধ্যে এই সূচের উপস্থিতি নিয়ে আলোড়ন পড়েছে এলাকায় কিন্তু কীভাবে মানব শরীরে এল এই সূচ তা ভাবতেই যেন গা শিউরে উঠছে সকলের। জীবন্ত মানুষের শরীরে অসংখ্য সূচ বা গোটা শরীরের মধ্যে যেন কিলবিল করছে সূচগুলি। মানব শরীরে এই সূচ কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় মালদা। অলৌকিক না কালা জাদু না চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো কিছু তা নিয়েই এলাকায় চলছে জোর চর্চা। যুবকের বাড়িতে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হচ্ছে এবং তারপর বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের। কালা জাদু বলে কিছু হয় না। আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি বলে দাবি বিজ্ঞান মঞ্চের।
মালদার কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জ-এর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিশেষভাবে সক্ষম যুবক হায়দার আলি (২৭)। ওই যুবকের স্ত্রী নাসিমা খাতুনের বক্তব্য , কয়েক মাস আগে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের একটি নার্সিংহোমে পেট থেকে অস্ত্রোপচার করে দুই দফায় মোট ৩৭টি সূচ তাঁর স্বামীর শরীর থেকে বের করা হয়েছিল। সেই সূচ চিকিৎসকরা তাঁদের দেখিয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেছেন। চিকিৎসার জন্য বাড়ির ঘটিবটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন বলে তিনি জানান। তাঁর কথায়, 'আর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবার নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। কিভাবে স্বামীর শরীরে সূচ তৈরি হচ্ছে জানি না। আমাদের মনে হচ্ছে 'কালাজাদু' করেই স্বামীর শরীরে কেউ সূচ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।'
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচক থানার সুলতানগঞ্জ মধ্যপাড়া এলাকায় মাসির বাড়িতেই থাকেন ওই বিশেষভাবে সক্ষম যুবক হায়দার আলি। তাঁর স্ত্রীর নাম নাসিমা খাতুন। ছয় বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের দুবছরের মধ্যেই তাঁদের পরপর দুই সন্তান জন্মের সময় মারা যায়। হায়দারের মা সামেনা বিবি। তিনি দীর্ঘদিন আগেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর হায়দারের বাবা আলেপ শেখ দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। হায়দার-এর বাবার বাড়ি
কালিয়াচকের বাধন এলাকায়। গত দেড় বছর ধরেই মূলত হায়দার আলির শরীরে এই সূচ-এর সমস্যা তৈরি হয়েছে। হায়দারের এক আত্মীয় মহম্মদ সাকির শেখ বলেন, 'গত দেড় বছর আগে হায়দার যখন শরীরের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল তখন ওকে আমরা মালদা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। এক্সরের প্লেট চোখের সামনে তুলেই যেন সকলের চক্ষুচরক গাছ হয়ে যায়। হায়দারের হাতে, পেটে, পিঠে কিলবিল করছে সূচ। এই সূচগুলো কোথা থেকে এল তা আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।' গত দু'মাস আগে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের একটি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপ্রচার করে হায়দারের শরীর থেকে দুই দফায় মোট প্রায় ৩০ টি সূচ বের করেছিলেন চিকিৎসকরা।
সেই সূচ বেশ বড় সাইজের। আবারও নাকি হায়দারের শরীরে অসংখ্য সুচ দেখা দিয়েছে বলে তাঁর দাবি। এদিকে হায়দারের শরীরের এই সূচ কাণ্ড নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত পাড়া-প্রতিবেশীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আনারুল শেখ , যশোদা বর্মনদের বক্তব্য, এমন অসুখের কথা জীবনে কোনদিন শুনিনি। জীবন্ত মানুষের শরীরে অসংখ্য সূচ! এটা ভাবাই যায় না । এক্সরে করার পর হায়দারের দুই হাতে, পেটে অসংখ্য সূচ ধরা পড়েছে । এটা কী করে সম্ভব? এই ঘটনার পিছনে অবশ্যই কিছু অবৈজ্ঞানিক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। যদিও এর পিছনে কালাজাদু বা অন্য কোনো কুসংস্কার জড়িত নেই বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক মনোরঞ্জন দাস।
মালদার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন , 'আগে দেখতে হবে ওই যুবক কোনও সময় মাদকাসক্ত ছিল কিনা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ব্যবহার করে নেশা করে থাকে কেউ কেউ। শরীরে সূচ ঢুকে থাকলে সেটার একটা প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আগে রোগীকে আমরা মানসিক দিক দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখব। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি টিম ওই যুবকের বাড়িতে যাবে। মানবদেহে কখনোই সূচের জন্ম হয় না। যেহেতু ওই যুবক মানসিক রোগী তাই হয় নিজে শরীরে সে সুচ ঢুকিয়েছে না হলে সে যেহেতু বিশেষভাবে সক্ষম তাই তাঁকে সুস্থ করে তোলার নাম করে কোন গুনিন বা ওঝা তাঁর দেহে সুচ ঢুকিয়ে দিতে পারে। তবে সমস্তটাই এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'