কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২২ আগস্ট ২০২৫
শিয়ালদহের কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিক ছাত্রদের ‘বাংলাদেশি’ বলে গালিগালাজ ও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বুধবার রাতে শিয়ালদহ সেতুর নিচে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ।
অভিযোগ, হস্টেলের কয়েক জন পড়ুয়া মোবাইলের কভার কিনতে একটি দোকানে গেলে দোকানদারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। বাংলায় কথা বলার কারণেই তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হয় এবং দেশ থেকে বার করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর লোহার রড ও হকি স্টিক দিয়ে তাঁদের উপর হামলা চালানো হয়। আক্রান্তদের বাঁচাতে গেলে আরও কয়েক জন পড়ুয়াকেও মারধর করা হয়। এমনকি ছুরি নিয়ে হামলার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে।
আক্রান্ত এক পড়ুয়া বলেন, ‘হিন্দিতে বলছে, বাংলাদেশি বলব। কী করবি বল? কী করার আছে কর। এরপর আমায় মারল। আমার মোবাইল কেড়ে নিল। আমাদের একটা ছেলেকে আটকেও রেখেছিল।’ আক্রান্ত ছাত্রের বন্ধু বলেন, ‘আমাদের হস্টেলের কিছু ছেলে মোবাইলের কভার কিনতে যায়। তখন একটা লোক আমাদের বাংলাদেশি বলে আখ্যা দেয়। তার জন্য আমরা প্রতিবাদ করি। সেই কারণে, ছুরি-বন্দুক দিয়ে আঘাত করে আমাদের।’
হস্টেলের আবাসিক ও হাজরা ল কলেজের ছাত্র ইসমাইল শেখ জানান, আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন। ঘটনার পর রাতেই আক্রান্ত পড়ুয়ারা মুচিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ছাত্রদের দাবি, হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
এদিকে স্থানীয় দোকানদারদের অভিযোগ, ছাত্ররা তাঁদের দোকানপাট ভাঙচুর করে তছনছ করে দিয়েছে। ব্যবসা করতে বসে তাঁদের এই ধরনের ঘটনায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। মুচিপাড়া থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তৎপর হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কারমাইকেল হস্টেলের সুপার এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয় কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। সেখানে রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। কারমাইকেল হস্টেলের সুপারের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে পুলিশের কাছে পৃথক অভিযোগ দায়ের করতেও পিছপা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের বহু সংখ্যালঘু পড়ুয়া এই কারমাইকেল হস্টেলে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে ঘটলেও পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলেও নড়চড় শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে অভিযোগ করেছেন, জাতিগত বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কেন্দ্র। এবার শহরের বুকে বাঙালি ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।