• দাদাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই অমর রায়কে খুন!
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৫
  • মনসুর হাবিবুল্লাহ, দিনহাটা: ডাওয়াগুড়ি যেন ‘বদলাপুর’। প্রতিশোধের আগুনে একের পর এক খুনে রক্তাক্ত হয়েছে গোটা এলাকা। ২০১৫ সালের মে মাসে ভিনজাতের মেয়েকে বিয়ে করেছিল রঞ্জিত মল্লিক। সেই ‘অপরাধেই’ গুলি করে খুন করা হয় তাঁকে। অভিযুক্ত ছিল তিনজন-অমর রায়, গৌতম দাস এবং বাপি দাস। সেদিনের পর থেকেই অশান্তির ছায়া নামতে শুরু করেছিল ডাওয়াগুড়িতে।

    খুনের কালো ইতিহাস এখানেই থেমে থাকেনি। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে গৌতম দাসকে গুলি করে খুন করা হয়। রঞ্জিতের খুনে অভিযুক্ত গৌতমের দেহ মিলেছিল রক্তাক্ত অবস্থায়। সেই মামলায় চার্জশিটে নাম জড়ায় রঞ্জিতের মা এবং তার ভাই বিশ্বজিৎ মল্লিকের। দাদার মৃত্যুর বদলা নিতেই বিশ্বজিৎ ধীরে ধীরে গড়ে তোলে নিজস্ব গ্যাং।

    এরপর ২০১৯ সালের মার্চ। একটি বিয়েবাড়িতে গোলাগুলিতে প্রাণ হারায় বিপ্লব বিশ্বাস নামে মাত্র ১১ বছরের এক শিশু। অভিযোগ ওঠে তাপস রায় সহ চারজনের বিরুদ্ধে। সময়ের স্রোতে তাপস চলে আসে অমর রায়ের ছত্রছায়ায়। অথচ এই যোগসূত্রই শেষ পর্যন্ত কাল হয় অমরের জন্য।

    গত ৯ আগস্ট চার সঙ্গীকে নিয়ে ডোডেয়ারহাটে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা অমর। অভ্যাসমতো সেদিনও পাশে ছিল তাপস। ভাড়াটে শার্প শ্যুটাররা হঠাৎই এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। চারটে গুলি লাগে অমরের শরীরে। দু’টি মাথায় ও দু’টি পেটে। মাংসের বাজারেই লুটিয়ে পড়েন অমর। আততায়ীরা জানত, প্রতি শনিবার অমর বাজারে আসেন, তারপর রাতে হয় পার্টি। তাই সহজেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। ঘটনাচক্রে, গুলি চালানোর সময় ২০১৯ সেই শিশুমৃত্যুর কথাও তুলেছিল আততায়ীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেদিন তাপসকেও টার্গেট করেছিল শার্প শ্যুটাররা। কিন্তু বরাতজোরে সে বেঁচে যায়। গুলি লাগে অমর ও তাঁর গাড়ির চালক আলমগীরের। অমর ঘটনাস্থলেই মারা যান। আলমগীর জখম হন।

    পুলিস ইতিমধ্যেই বিনয় রায় নামে এক শার্প শ্যুটারকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন যোগসূত্র। অমর খুনের নেপথ্যে যে রঞ্জিতের ভাই বিশ্বজিৎ ওরফে বুড়ার গ্যাং রয়েছে, সেই ইঙ্গিতও পেয়েছে পুলিস। ইতিমধ্যেই বুড়ার খোঁজে তল্লাশি চলছে ভিনরাজ্য থেকে প্রতিবেশী দেশ পর্যন্ত।

    তোর্সা নদীর চরে বালি পাচার নিয়ে অমর আর বুড়ার দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধে গৌতমকে খুন করা হয়েছিল আগেই। এবার খুন হলেন অমরও। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিস সুপার (হেড কোয়ার্টার) কৃষ্ণগোপাল মিনা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। বিনয় রায় নামে একজন অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)