তিন রাজ্যের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অস্ত্রের কারবারি চানা ধৃত, স্বস্তিতে গোয়েন্দারা
বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: বয়স ৫৮ বছর। পরনে বেশিরভাগ সময় থাকে সাদা জামা। আর দশজন প্রৌঢ়ের মতোই চালচলন। কখনও বিহার, ঝাড়খণ্ড আবার কখনও এরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সে ঘুরে বেড়ায়। তবে ‘চানা’ সাধারণ কেউ নয়, কুখ্যাত অস্ত্র কারবারি। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং এরাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছে সে ছিল ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। বুধবার রাতে এসটিএফ তাকে অণ্ডাল থেকে ১০টি ওয়ান শটার সহ গ্রেপ্তার করে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছর আগে ডানকুনি থেকে অল্পের জন্য ফসকে যায় চানা। কলকাতার কাছেই কয়েকটি পিস্তল সে সরবরাহ করে গিয়েছিল। গোয়েন্দারা পৌঁছনোর আগে সে চম্পট দেয়। বিহারের বাঁকা জেলায় ফিরে কয়েকদিন সে কারবার বন্ধ রাখে। কিছুদিন পর আবার অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে দেয়। বারবার মোবাইল নম্বর বদল করে। কিন্তু তারপরও শেষরক্ষা হয়নি। সিমকার্ড বারবার বদল করলেও বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যায়। সেটা হয়তো তার জানা ছিল না। সেই ভুলেই গোয়েন্দারা তাকে জালে তুলে নেয়।
পুলিস সূত্রে আরও জানা জানা গিয়েছে, আশরাফুল আনসারি ওরফে চানার বিহারে নিজের অস্ত্র কারখানা রয়েছে। নিজেই ওয়ান শটার, সেভেন এমএম, নাইন এমএম পিস্তল তৈরি করতে পারে। আবার সে ক্যারিয়ারেরও কাজ করে। সাধারণত যারা অস্ত্র কারখানার মালিক তারা ক্যারিয়ারের কাজ করে না। কিন্তু বাড়তি মুনাফার আশায় চানা সবটা করত। তাকে ‘অর্ডার’ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই পিস্তল সরবরাহ করে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, অণ্ডালে পিস্তল ও গুলি অন্য আরেকজনকে সরবরাহ করার কথা ছিল। বীরভূমের আর এক ডিলারের সেগুলি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোয়েন্দারা অতীতের অভিজ্ঞতা থাকায় ঝুঁকি নেননি। তাঁরা তাকে সময় না দিয়ে পাকড়াও করে। এক আধিকারিক বলেন, চানা প্রচুর পিস্তল সরবরাহের বরাত নিয়েছিল। সে বিভিন্ন কৌশলে পিস্তল নিয়ে আসে। এর আগে কলকাতার বিভিন্ন জায়গাতেও সে অস্ত্র সরবরাহ করে গিয়েছে। কিন্তু তখন গোয়েন্দারা তারা নাগাল পায়নি। সে বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের অন্যান্য কারবারিদেরও অস্ত্র বিক্রি করত। তার তৈরি ওয়ান শটার পিস্তলগুলি উন্নতমানের। ভালো মানের লোহার দিয়ে সেগুলি তৈরি করত। প্রতিটি পিস্তল সে চার-পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে। কম দামেও ওয়ান শটার পাওয়া যায়। সেগুলির মান ততটা ভালো নয়। চানার তৈরি ওয়ান শটার দামি হলেও তা সেটি অনেক উন্নত। ধৃতকে জেরা করে গোয়েন্দারা এরাজ্যের ডিলার, সাব ডিলারদের খোঁজে তল্লাশি চালাবে। তার সঙ্গে এরাজ্যের অনেকেই এই কারবারে যুক্ত রয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, চানা গ্রেপ্তার হওয়াই বড় সাফল্য। কারণ সে শুধু ক্যারিয়ার নয়, অস্ত্র কারখানার মালিক।