• ভাষা বিতর্কের মাঝেই পুজোয় আসছে শান্তিপুর, ফুলিয়ার বাংলা হরফের শাড়ি
    বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: বাংলা ও বাঙালির আবেগে এবার নতুন সংযোজন ‘বাংলা পাড়ের’ শাড়ি।  পুজোর বাজারে আসছে শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীদের এই অভিনব সৃষ্টিকর্ম। সুতোর টানে বাংলা হরফে মিলেমিশে যাবে ভাষা-ঐতিহ্য ও রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিৎ। তরজার আবহে বাঙালির ভাবাবেগে নতুন বিপ্লব আনতে চলেছে এই শাড়ি। পুজোয় শুধু কলকাতা বা রাজ্য নয়। অর্ডার আসছে বিদেশ থেকেও। 

    বাঙালির আবেগ ঐতিহ্যে আজও নিজেদের অবস্থান অটুট রেখেছে শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁত। শ’য়ে শ’য়ে বছর ধরে এখানকার শিল্পীরা বাংলাবাসীকে দিয়ে এসেছে তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতির স্বাদ। আর সেই কারণেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের নজর থাকে গঙ্গার পূর্বপাড়ের এই প্রাচীন জনপদের শিল্পীদের হাতে তৈরি নতুন শাড়ির দিকে। এবার পরিস্থিতি একটু অন্যরকম। ভিনরাজ্যে গিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলে নির্যাতিত হচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি গরমাগরম। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষায় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে বাঙালির জাত্যভিমান বাঁচানোর দায় এড়াতে পারেন না শান্তিপুর ও ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীরা। আর পারেন না বলেই তাঁদের শাড়ি তৈরির ভাবনাও এবার বাংলাময়। শান্তিপুরের দেদার তৈরি হচ্ছে বাংলা পাড়ের শাড়ি। গোটা গোটা বাংলা হরফে কোনওটির পাড়ে ফুটে উঠছে রবীন্দ্রনাথের লেখনী। কোনওটির আঁচলে স্থান পাচ্ছে সত্যজিৎ রায়। শাড়ির পাড়ে সুতোর নিখুঁত বুনন বলে উঠছে—‘আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, প্রিয় আমার ওগো প্রিয়।’ কিংবা ‘বাংলা ও বাঙালি’ থেকে ‘পুজোর গন্ধ এসেছে...।’ এইসব শাড়ি এখন চাহিদার তালিকায় শীর্ষে। হ্যান্ডলুমের প্রস্তুতকারকরা বলছেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, বাংলা হরফ লেখা পাড় কিংবা আঁচলের শাড়ির ডিমান্ড আসছে বিদেশ থেকেও।

     শান্তিপুর-ফুলিয়ার অন্যতম বিখ্যত হ্যান্ডলুম প্রস্তুতকারক তথা পদ্মশ্রী বীরেন বসাকের পরিবারের তরফে অভিনব বসাক বলেন, ‘বাংলা লেখা শাড়ির চাহিদা গত বছর থেকেই ছিল। এই বছর সেই চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এমনকী বিদেশ থেকেও আমরা অর্ডার পাচ্ছি। দেড় হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ির দাম। কী কারণে চাহিদার বৃদ্ধি তা বলতে পারব না। তবুও হ্যান্ডলুমের এই শাড়ির গুরুত্ব বেড়েছে।’ শান্তিপুরের অধিকাংশই পাওয়ারলুম গ্রাস করলেও ফুলিয়ার অলিগলিতে এখনও স্বমহিমায় বিরাজ করছে হ্যান্ডলুম। পুজোর আগে সেখানে ব্যস্ততা তুঙ্গে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে এখন অর্ডার সরবরাহ করতে উদগ্রীব শিল্পীরা। তাঁরা বলছেন, এবার পুজোয় বাংলা পাড়ের শাড়িই হতে চলেছে ‹ট্রাম্প কার্ড।
  • Link to this news (বর্তমান)