ভিন রাজ্য থেকে আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করেছিল জঙ্গলের ছেলে সাদ্দাম শেখ, কাটোয়ায় বড়সর দুষ্কর্মের ছক সাজিয়েছিল বাবা-ছেলে
বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী জঙ্গল শেখের ছেলে সাদ্দাম শেখ দীর্ঘ আট বছর জেলবন্দি ছিল। দু’ বছর আগে সে জামিন পেয়ে ইন্টারনেট কলিং অ্যাপের সাহায্যে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাটোয়ার খাজুরডিহি গ্রামে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করেছিল। ধৃত সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিস। খাজুরডিহি গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে দু’ রাউন্ড গুলি সহ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিস। বৃহস্পতিবার ফের সাদ্দাম শেখকে কাটোয়া মহকুমা এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে আবার ৫ দিন পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, সাদ্দাম ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকেই নদীয়া জেলার কোতয়ালি থানার জালালখালি এলাকায় একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে থাকত। তাকে তার স্ত্রী জিন্নাত বিবি সেখানে ভর্তি করে দিয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই কাটোয়ায় খুন, লুটপাট সহ বড়সড় হামলার ঘুঁটি সাজিয়েছিল জঙ্গল শেখ ও তার ছেলে সাদ্দাম শেখ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বোলপুরে জঙ্গল গ্যাংয়ের দুই বিশ্বস্ত সঙ্গীকে ডেকে তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়েছিল আরেক জঙ্গল অনুগামী কিতাবুল শেখ ওরফে তারকাটা। জঙ্গল ও ছেলে সাদ্দামের নির্দেশেই দুই বিশ্বস্ত সঙ্গীর মাধ্যমে কাটোয়ায় মজুত করেছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ওই বছরেরই ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে কাটোয়া শহরের কেশিয়া মাঠপাড়া এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে জঙ্গলের দুই সঙ্গী রমজান শেখ ও রফিক শেখকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিস। তাদের কাছ থেকে দু’টি দেশি পাইপগান ও পাঁচশ গ্রাম বোমের মশলা উদ্ধার করা হয়েছিল। পুলিস কাটোয়ার পালিটা রোডের একটি সাইকেলের গ্যারাজে ওইসব আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমের মশলা পাওয়া গিয়েছিল। পুলিস গিয়ে দেখেছিল গ্যারাজের শাটার নামানো। ভিতর থেকে চাপা স্বরে কথাবার্তা ভেসে আসছিল। পুলিস শাটার তুলে ওই দু› জনকে পাকড়াও করেছিল। ধৃতরা পুলিসের কাছে প্রাথমিক ভাবে সব স্বীকার করেো তারা জানিয়েছিল, জঙ্গল ও সাদ্দামের নির্দেশে রমজান ও রফিক শেখ বোলপুর যায়। সেখানেই তারা জঙ্গলের আরেক শাগরেদ কিতাবুল শেখ ওরফে তারকাটার সঙ্গে দেখা করে। তারকাটা তাদের হাতে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেয়। জঙ্গলের নির্দেশ ছিল ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি কাটোয়া ও নদীয়া জেলা এলাকায় জঙ্গল গ্যাংয়ের বাকি সদস্যদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। কিছুদিনের মধ্যেই জঙ্গল ও সাদ্দাম কাটোয়ায় ঢুকত। শহরে খুন, লুটপাট সহ বড়সড় হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তখন ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি কাজে লাগাত। রফিক শেখ কাটোয়া শহরে রিকশ চালাত। তার আড়ালেই জঙ্গলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে চলত। ফোনে জঙ্গল সরাসরি রফিক ও রমজানকে নির্দেশ দেয় পুরনো সঙ্গীদের জড়ো করতে। সেই মামলাতেই সাদ্দামকে ১৪ আগস্ট নদীয়া জেলার নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার করে। তাকে হেফাজতে নিয়েই পুলিস আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি বেশ কিছু তথ্য জানতে পারে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদ্দাম মোবাইলে সিম কার্ড ব্যবহার করত না। ওয়াইফাই দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করত। সেখানে সে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করেই ভিনরাজ্যের কুখ্যতা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তারপরেই সে সমস্ত তথ্য মুছে দিত প্রমাণ লোপাটের জন্য। ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, জঙ্গল-সাদ্দাম শহরে ফিরলেই শহরের পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। এর আগে দুষ্কৃতীরা শহরের একটি সোনার দোকানে দুঃসাহসিক ডাকাতি করে। এসব ভেবেই সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।