নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: শহরজুড়ে মাথা তুলছে শপিং মল। তার কোনওটি নামি ব্রান্ডের তো কোনওটি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে তৈরি। রীতিমতো পুর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিনা পার্কিং জোন তৈরি করেই চালু করে দেওয়া হয়েছে সেগুলি। মলে আসা মানুষকে অগত্যা পার্কিং করতে হচ্ছে খোলা রাস্তাতেই। যার জেরে হাঁসফাঁস অবস্থা রানাঘাট শহরের। অথচ, এই সব দেখেও রানাঘাট পুরসভা কার্যত নীরব। ক্ষোভে ফুঁসছেন নাগরিকরা।
রানাঘাট শহর এমনিতেই ঘিঞ্জি। পশ্চিমপ্রান্ত অধিক উন্নত হওয়া সত্ত্বেও পথঘাট অপরিসর। টোটোর উৎপাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার উপর শহরের ইতিউতি গজিয়ে উঠেছে শপিংমল। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঝাঁ চকচকে মল। কিন্তু, একটিতেও তৈরি করা হয়নি পার্কিং। অথচ, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপাল (বিল্ডিং) রুলস ২০০৭ বলছে, ৫০ বর্গমিটারে পার্কিং প্রয়োজন না হলেও প্রতি ১০০ বর্গমিটার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একটি পার্কিং বাধ্যতামূলক। এর চেয়েও বড় বর্গমিটার হলে সেই অনুপাতে বাড়বে পার্কিং জোনের সাইজ। কিন্তু, এই আইনকে অগ্রাহ্য করেই শপিংমলগুলি গড়ে উঠেছে ও উঠছে বলে অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষকে বাইক অথবা গাড়ি দাঁড় করাতে হচ্ছে রাস্তাতেই। তৈরি হচ্ছে যানজট। পুরসভার তরফে হেলদোল নেই।
নাগরিকদের অভিযোগ, শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত অনেকে এইসব বেআইনি মল তৈরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। রানাঘাট নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়দেব মুখোপাধ্যায়ে বলেন, ‘যখন এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল তখনই আমরা চেয়ারম্যানকে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম। কিন্তু পুরসভা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। পরে শহরের যানজট নিয়েও অভিযোগ করা হয়েছিল। লাভের লাভ কিছুই হয়নি। আসলে প্রভাবশালীরাই শপিংমল তৈরির কাজে যুক্ত থাকলে আইনের দৃষ্টি সেদিকে পড়ে না।’
মিউনিসিপাল আইনে যে পার্কিং তৈরি বাধ্যতামূলক, তা স্বীকার করে নেয় পুরসভা। তাহলে কীভাবে ছাড়পত্র পাচ্ছে মলগুলি? বিষয়টি নিয়ে অবশ্য পুরসভার দাবি, কাউকেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। বেআইনিভাবে সেগুলি চলছে। রানাঘাট পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অবশ্যই পার্কিং বাধ্যতামূলক। আমরা কাউকে ছাড়পত্র দিইনি। তা সত্ত্বেও শপিংমলগুলি চলছে। আমরা বোর্ড মিটিংয়ে প্রসঙ্গটি তুলব। প্রতিটি মলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পার্কিং তাদের করতেই হবে।’ রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের বোর্ডের সময় একটিমাত্র শপিংমল হয়েছে। সেটিতে ভূগর্ভস্থ পার্কিং হয়েছে। তবেই আমরা ছাড়পত্র দিয়েছি। আগে যেগুলি হয়েছে সেগুলিতে নেই ঠিকই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ -নিজস্ব চিত্র