মাড়গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনা, ১২ অভিযুক্তকে সাজা রামপুরহাট আদালতের
বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মাড়গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীকে বোমা মেরে খুনের দায়ে ১২জন কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হল। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সন্দীপকুমার কুণ্ডু এই রায় ঘোষণা করেন। বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই মামলায় মোট ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার আদালত অভিযুক্ত ১২ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে। এদিন বিচারক সকলের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেককে ২লক্ষ ১০হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাদণ্ডের সাজা চলবে। যদিও আমরা ফাঁসির জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম।
২০২৩ সালের ৪ফেব্রুয়ারি বোমা মেরে মাড়গ্রাম-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেতা ভট্টু শেখের ভাই লাল্টু শেখ ও তাঁর ছায়াসঙ্গী নিউটন শেখকে খুন করা হয়। তাঁরা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনায় এলাকারই ২০জন কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীর নামে থানায় এফআইআর দায়ের করেন মৃত নিউটনের দাদা আমিরুল ইসলাম। পুলিস ঘটনার রাতেই অন্যতম অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা সুজাউদ্দিন শেখকে গ্রেপ্তার করে। পরেরদিন তাঁকে জেরা করে বাড়ির পাশ থেকে প্রচুর বোমা উদ্ধার করা হয়। পরে সুজাউদ্দিনের দুই ছেলে লাকি ও বাপি, জহির ও তার ছেলে হীরক, ফটিক, শফিক, আনারুল, আইনাল, গব্বর, আকবর ও ছোটু মালকে গ্রেপ্তার করে। বাকি আটজন ফেরার হয়ে যায়। ঘটনার প্রায় তিন মাসের মাথায় আটজনকে ফেরার দেখিয়ে ১২জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিস।
বিভাসবাবু বলেন, ঘটনাস্থলে একটি জুতো পড়েছিল। পরে তদন্তে এক অভিযুক্তের বাড়ি থেকে অপর জুতোটি উদ্ধার হয়। ফুটপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ এসে তা পরীক্ষা করে ওই অভিযুক্তের পায়ের ছাপ বলে রিপোর্ট দেন। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় এক মৃতের রক্তের সঙ্গে ম্যাচ করে যায়। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা ঘটনাস্থল নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু কোনওটাই ধোপে টেকেনি। কারণ, ফরেন্সিক ও ডিএনএ রিপোর্ট এই মামলায় খুব সাহায্য করেছে। এছাড়া এই ১২জনের মধ্যে অধিকাংশেরই ঘটনাস্থলে ওই সময় মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া গিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এলাকা দখলকে কেন্দ্র করেই এই খুন। মৃত দু’জন ধুলফেলা মোড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযুক্তরা তাঁদের হুমকি দেয়। ওই দুই যুবক যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের লক্ষ্য করে চার-পাঁচটি বোমা মারা হয়। বাকি আটজন ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধেও ট্রায়াল শুরু হবে।
আদালতের রায়ে খুশি মৃতদের আত্মীয়-পরিজনরা। ভুট্টু শেখ বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। তবে আমাদের ভাইরা সারা জীবনের মতো চলে গিয়েছে। অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা হলে আরও খুশি হতাম। রায় শুনে আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে অভিযুক্তদের পরিবার। সুজাউদ্দিনের স্ত্রী সোনালি বেগম এই সাজার রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অভিযুক্তদের আইনজীবী পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।