শিয়ালদহে বাঙালি নিগ্রহে তোলপাড়, বাংলা বলায় ছাত্রদের ফেলে মার, ধৃত ২
বর্তমান | ২২ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শিয়ালদহের শিশির মার্কেটে বাঙালি ছাত্র নিগ্রহের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। খাস কলকাতায় বুধবার রাতে হিন্দিভাষী মালিকের মোবাইল ফোনের দোকানে বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হস্টেলের চার ছাত্রকে হকি স্টিক ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করার কাণ্ড প্রকাশ্যে আসে। ‘বাংলাদেশি’ ও ‘রোহিঙ্গা’ বলে দাগিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বুকেই বাঙালি পড়ুয়াদের এই নিগ্রহে তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। হিন্দিভাষী ব্যবসায়ীদের মারধরে গুরুতর জখম হয়েছেন চার ছাত্র। তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মারধর ও মানুষকে খেপিয়ে তোলার মূল হোতা সংশ্লিষ্ট দোকানের মালিক ইমতিয়াজ আলি এবং কর্মচারী দীপক কুমার সাউকে বৃহস্পতিবার সকালে কাইজার স্ট্রিট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে মুচিপাড়া থানার পুলিস। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এদিন ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতের এসিজেএম (২) এজলাসে হাজির করা হলে, বিচারক তাদের পাঁচদিনের জন্য পুলিস হেফাজতে পাঠিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজ চলছে।
বাংলাভাষী ছাত্রদের ‘বাংলাদেশি’ ও ‘রোহিঙ্গা’ তকমা সেঁটে মারধর করার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সব মহল। ঘটনার রাতেই মুচিপাড়া থানায় বিক্ষোভ দেখান এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদ কর্মীরা। ঘটনার জেরে এদিন শিয়ালদহ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র মারধরের ঘটনায় যুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাপক্ষ। এই ইস্যুতে কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখিয়েছে এসএফআই কলকাতা জেলা কমিটি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। এই আবর্তেই কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিক ছাত্রদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এদিন পুলিস আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুধবার রাতের ঘটনায় যাতে নতুন করে করে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না তৈরি হয়, তার জন্য পুলিস পোস্টিংয়ের আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি, কারমাইকেল হস্টেল এলাকায় পেট্রোলিং চালানোর জন্য আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৈঠকে অস্থায়ী উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার উপস্থিত ছিলেন। হস্টেল এবং আবাসিক পড়ুয়াদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যেও একটি জরুরি বৈঠক করেছে।
বুধবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে তদন্তকারীরা বলছেন, কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিক তথা হাজরা ল’কলেজের বিএ (এলএলবি) ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র তারিক আলি কয়েকজন সহ-আবাসিকের সঙ্গে শিশির মার্কেটের একটি দোকানে মোবাইল ফোনের কভার কিনতে গিয়েছিলেন। একটি কভার পছন্দ হলেও দর কষাষষি করছিলেন। দামে না পোষানোয় তিনি তা নিতে চাননি। কিন্তু দোকানদার ইমতিয়াজ আলি ‘কিনতেই হবে’ বলে চাপ দেয় বলে অভিযোগ। ছাত্রদের অভিযোগ, তাঁদের বলা হয়, কথা বলতে হবে হিন্দিতে। তা নিয়ে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়ে যায়। তখনই ছাত্রদের ‘বাংলাদেশি’, ‘রোহিঙ্গা’, ‘ইস দেশ সে ভাগ যাও’ বলার সঙ্গে গালিগালাজ করা হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, এরপর হস্টেলে ফিরে এসে ছাত্ররা বাকি সহ- আবাসকিদের ‘খাস কলকাতায় বাঙালি হেনস্তা’র বিষয়টি বিষয়টি জানান। এরপর হস্টেলের বেশ কয়েকজন আবাসিক সম্মিলিতভাবে ওই দোকানে প্রতিবাদ করতে যান। তখনই দলবল জুটিয়ে ছাত্রদের রাস্তায় ফেলে নৃশংসভাবে মারধর করে ইমতিয়াজ ও তার কর্মচারী দীপক সাউ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মুচিপাড়া থানার পুলিস। উদ্ধার করে ছাত্রদের। তারিক আলির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়।