তিনটি মেট্রো রুটের উদ্বোধন করতে আজ বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তবে বিভিন্ন কারণে সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট আমন্ত্রণপত্রে রেলমন্ত্রক ফলাও করে তুলে ধরেছে, পশ্চিমবঙ্গে রেলখাতের উন্নয়ন এবং বরাদ্দ অর্থের হিসাব। প্রশ্ন এখানেই, কীসের পরিকল্পনা এবং কীসের হিসাব? রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলায় রেলপথ ও মেট্রো সম্প্রসারণের যাবতীয় ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী যে নতুন তিন মেট্রো রুটের উদ্বোধন করতে চলেছেন তার প্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৯-২০১০ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটেও তিন মেট্রো রুটের প্রস্তাব করেছিলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, বর্তমানের এনডিএ সরকার যে ‘বিশ্বমানের রেলওয়ে স্টেশন’ নির্মাণে ব্যস্ত, সেই ধারণাও প্রথম দিয়েছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা। ২০০৯-২০১০ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে ৫০টি স্টেশনকে ‘বিশ্বমানের রেলওয়ে স্টেশন’-এ রূপান্তরের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। এরপর ২০১০-১১ অর্থবর্ষের বাজেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবক্রমে আরও ১০টি অতিরিক্ত স্টেশনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছিল। সুতরাং মেট্রো রুটের এই ধারণা যে বিজেপির প্রস্তাবিত নয়, তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, আজ নবনির্মিত যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে থেকে ইয়লো লাইনের (নোয়াপাড়া-বারাসত) নোয়াপাড়া থেকে জয়হিন্দ বিমানবন্দর অংশে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অরেঞ্জ লাইনের (নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন (রুবি) থেকে বেলেঘাটা স্টেশন এবং গ্রিন লাইনের (সেক্টর ফাইভ-হাওড়া ময়দান) এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে শিয়ালদহ স্টেশন অংশে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন তিনি। জানা যাচ্ছে, হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক ভায়া বিবাদী বাগ এবং এসপ্লানেড মেট্রো রুটের প্রস্তাব করেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক ভায়া সেন্ট্রাল অভিনিউ পরিকল্পনায় পরিমার্জন এনে আজকের রুটের
ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি, ইয়লো লাইনে শহর কলকাতার প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে বারাসতকে মেট্রো পথে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা এবং প্রস্তাবও ছিল তাঁর, ২০০৯-২০১০ অর্থবর্ষের বাজেটে। উল্লেখ্য, উইপ্রো থেকে সেক্টর ফাইভ রুটের উদ্বোধন হয়েছিল ২০২২-এর ১৩ ফেব্রুয়ারি। সল্টলেক স্টেডিয়াম থেকে শিয়ালদহ রুটের উদ্বোধন হয়েছিল ২০২২-এর ১১ জুলাই এবং হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড রুটের উদ্বোধন হয়েছিল ২০২৪-এর ৬ মার্চ। এবার শহরের তিন প্রাণকেন্দ্র জুড়তে চলেছে মেট্রো পথে, যার নকশা এঁকেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতার প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্বোধনে সুবিশাল আয়োজন করেছে রেলমন্ত্রক। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্বের স্বীকৃতিটুকু দেয়নি কেন্দ্র! বরং জনসাধারণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে ভোটমুখি বাংলায় রাজনৈতিক প্রচারের ঢাল হিসাবেই বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের এহেন আচরণ নতুন নয়। আজকের যুগে বাংলার বুকে রেল ও মেট্রো সম্প্রসারণের অধিকাংশ নকশা নিজের হাতেই তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কতটা? এর উত্তর রয়েছে ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় রেল বাজেটেই।