• আবারও থমকাল কলকাতার হকারদের ভেন্ডিং সার্টিফিকেট বিলি করার প্রক্রিয়া! কবে শুরু, প্রশ্ন পুরসভার অন্দরেই?
    আনন্দবাজার | ২২ আগস্ট ২০২৫
  • কলকাতা পুরসভা আবার ‘ভেন্ডিং সার্টিফিকেট’ বিতরণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৬ অগস্ট থেকে এই কার্ড বিতরণ প্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল। কিন্তু তা শুরু করা যায়নি। কেন তা শুরু করা গেল না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে কলকাতা পুরসভার অন্দরে। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে শারদোৎসব শুরুর আগেই হকারদের শংসাপত্র দেওয়ার কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন পুর আধিকারিকেরা। সেইমতো, নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের মতো বড় হকার হাবে ৮,৭২৭টি সার্টিফিকেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাউন ভেন্ডিং কমিটির একাংশের আপত্তির কথা জানিয়ে ‘ভেন্ডিং সার্টিফিকেট’ বিতরণ প্রক্রিয়া আটকে দেওয়া হয়।

    গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর নবান্নের এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের বিভিন্ন অংশে হকারদের লাগামহীন দখলদারির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর নির্দেশেই কলকাতা শহরে হকার অভিযান শুরু হয়, যা পুজোর মরসুমে থমকে গেলেও চলতি বছরের মে মাস থেকে ফের শুরু হয়। সেই সমীক্ষার কাজশেষে হকারদের ভেন্ডিং সার্টিফিকেট দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। সমীক্ষার কাজ চলাকালীনই পুরসভার তরফে জানানো হয়েছিল, নতুন এই কার্ডগুলি হবে সম্পূর্ণ ভাবে ডিজিটাল। প্রতিটি কার্ডে থাকবে একটি কিউআর কোড, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট হকারের যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। ফলে কারও বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অন্যকে স্টল বিক্রি করা বা জায়গা ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠলে সহজেই তাঁকে শনাক্ত করা যাবে। এই প্রক্রিয়ায় নথিভুক্ত হন ৫৪,১৭৮ জন হকার। তাঁদের মধ্যে প্রথম দফার সমীক্ষায় চিহ্নিত প্রায় ১৪ হাজার হকারের মধ্যে থেকে নিয়ম মেনে চলা ৮,৭২৭ জনকে শংসাপত্র দেওয়া হবে বলেও কয়েক মাস আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা।

    কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, প্রথমে সেই ৫৪ হাজার হকারের ভাগ্য নির্ধারণ করা দরকার যাঁদের নাম প্রথমে সমীক্ষক দল নথিভুক্ত করেছে। নতুন ভেন্ডিং সার্টিফিকেটের তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখা দিয়েছে, অধিকাংশের নামই চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। তাই ঠিক হয়েছে, আবারও নতুন করে তালিকা তৈরি করে এই কাজ শুরু করা হবে। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভেন্ডিং সার্টিফিকেট বিতরণ নিয়ে কোনও বিতর্ক চাইছেন না পুরসভার আধিকারিকরা। সবকিছু যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেই কারণেই প্রথম পর্যায়ে হকারদের ভেন্ডিং সার্টিফিকেট বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। তাই মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়ার পরেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করবে পুরসভা।’’ ওই আধিকারিক আরও বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছি, যে দিন সার্টিফিকেট বিলি শুরু হবে, যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁরা হুড়োহুড়ি করে রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে বসবেন। এমনটা হলে শহরে বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই সাবধানে পা ফেলতে চাইছে কলকাতা পুরসভা।” সেই কারণে সমীক্ষায় পাওয়া নিবন্ধকৃত হকারদের তালিকা এখনও কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়নি।

    টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য তথা হকার জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির রাজ্য সভাপতি অসিত সাহা বলেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে শুধুমাত্র হকার উচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। হকারদের পুর্নবাসন বা শংসাপত্র বিলি বা পেশাগত উন্নয়নের কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসন আবার টাউন ভেন্ডিং কমিটির সুপারিশ কার্যকর করতে পারছে না। এ বিষয়ে ভেন্ডিং শংসাপত্র বিলি কী ভাবে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছি।’’ তবে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার হকারদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন এই হকার নেতা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)