• কিবুর মন্ত্রে উত্থান ময়দানের নতুন শক্তির
    আনন্দবাজার | ২২ আগস্ট ২০২৫
  • অভিষেকের ডুরান্ড কাপেই ইতিহাস ডায়মন্ড হারবার এফসি-র। যুবভারতীতে বুধবার রাতে ইস্টবেঙ্গলকে ২-১ হারিয়ে শেষ চারে উঠে কিবু ভিকুনা বলেছিলেন, ‘‘স্বপ্ন না-দেখলে সফল হওয়া যায় না।’’ তিনি যা উহ্য রেখেছিলেন তা হল, স্বপ্ন দেখার জন্য সাহসী হতে হয়।

    ডায়মন্ড হারবার পথচলা শুরু করেছিল মাত্র চার বছর আগে বাংলা নববর্ষের দিন। কোচ করা হয় মোহনবাগানকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করা কিবু ভিকুনাকে। অভিষেকের মরসুমে দল গড়া হয়েছিল বাটা স্টেডিয়ামে ট্রায়ালের মাধ্যমে। কিন্তু শক্তিশালী দল গড়ার জন্য যে মানের ফুটবলার প্রয়োজন, তা পাওয়া যায়নি ট্রায়ালে। ক্লাব কর্তারা তখন সই করালেন মোহনবাগান, মহমেডানে খেলা তীর্থঙ্কর সরকারকে।

    কলকাতা ময়দানের অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারের পরামর্শ অনুযায়ী ফুটবলার নেওয়া শুরু করে ডায়মন্ড হারবার। তীর্থঙ্করের অনুরোধেই দলে যোগ দেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, চেন্নাইয়িন এফসিতে খেলা ডিফেন্ডার অভিষেক দাস। তিনিও কাঁধে তুলে নিলেন দল গঠনের দায়িত্ব। তিনি এখন ডায়মন্ড হারবারের সহকারী কোচ। শতাব্দীপ্রাচীন ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ১৩৪তম ডুরান্ড কাপের ফাইনালে ওঠার পরের দিন আনন্দবাজারকে কিবুর সহকারী শোনালেন ডায়মন্ড হারবারের রূপকথার উত্থানের কাহিনি। অভিষেক বলছিলেন, ‘‘শুরুতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেই আমরা সব প্রতিযোগিতায় খেলব। অর্থের বিনিময়ে সরাসরি খেলার সুযোগ নেব না। অর্থ ব্যয় করা হবে শক্তিশালী দল গড়ার জন্য।’’

    শুধু ভাল দল গড়াই নয়, ডায়মন্ড হারবারের কর্তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, পেশাদারিত্ব কাকে বলে। শুরু থেকেই ফুটবলারদের হোটেলে রাখা হচ্ছে। এ বছর দু’টি হোটেলে থাকছেন তাঁরা। একটি হোটেলে থাকছেন সিনিয়র দলের ফুটবলারেরা। অন্য হোটেলে রয়েছে ‘ডেভেলপমেন্ট টিম’-এর ফুটবলারেরা। সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কের কাছে বিধাননগর পুরসভার মাঠের পরিচর্যাও করে ডায়মন্ড হারবার। ক্লাবের সহ সভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘সাফল্যের অন্যতম কারিগর কিবু। চার বছর আগে ভিসা সমস্যায় ওঁর কলকাতায় আসতে দেরি হচ্ছিল। সশরীরে হাজির না থাকলেও ফোনের মাধ্যমে নির্দেশ দিতেন ফুটবলারদের।’’

    অভিষেকের মরসুমেই কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে রানার্স হয়ে চমকে দিয়েছিল ডায়মন্ড হারবার। দ্বিতীয় বছর প্রিমিয়ার ডিভিশনে শেষ করে তৃতীয় স্থানে। সেই মরসুমেই আই লিগের তৃতীয় ডিভিশনে খেলেছিল ডায়মন্ড হারবার। ২০২৪-’২৫ মরসুমে আই লিগের তৃতীয় ও দ্বিতীয় ডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন হয় ডায়মন্ড হারবার। ভারতের কোনও ক্লাবের এই নজির নেই। এ বার আই লিগের প্রথম ডিভিশনে খেলবে কিবুর দল।

    মাত্র চার কোটি টাকার দল গড়ে অবিশ্বাস্য উত্থানের রহস্য কী? কিবু বলছিলেন, ‘‘আমরা শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। লড়াই কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। শিক্ষা নিয়ে ধাপে ধাপে উন্নতি করেছি আমরা। তবে এখানেই থেমে থাকলে হবে না।’’ কিবুর সহকারীর কথায়, ‘‘শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল, ভবিষ্যতের জন্য দল গড়া। বাঙালি ফুটবলারদের তুলে আনা। প্রথম মরসুমের সাফল্যে আমাদের আরও ভাল দল গড়তে উজ্জীবিত করে। কোন কোন ফুটবলার নিলে আই লিগে ভাল ফল হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সই করানো হয় জবি জাস্টিন, স্যামুয়েল লালমুনপুইয়া, আঙ্গুসানা, হোলিচরণ নার্জ়ারি-সহ একাধিক ফুটবলারকে।’’ যোগ করলেন, ‘‘বিদেশি ফুটবলার নির্বাচন স্বাধীন ভাবে করেছেন কিবুই। স্পেন থেকে তিনিই নিয়ে এসেছেন মিকেল কোর্তাসাকে। পঞ্জাব এফসি থেকে এসেছে লুকা মায়সেন। নেওয়া হয়েছে অনূর্ধ্ব-২৩ ব্রাজিল জাতীয় দলে খেলা ক্লেটন দা সিলভিয়েরা দা সিলভাকে। ১৫ জুন থেকে আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। আর গ্রুপ পর্বে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ১-৫ হারের পরে ফুটবলারদের নৈশভোজ দিয়েছিলেন ক্লাব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তিনি আসতে পারেননি। তবে দু’মিনিটের বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘ভেঙে না পড়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

    যুবভারতীতে শনিবার নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডকে হারিয়ে ডায়মন্ড হারবার কি পারবে বাংলার সম্মান রাখতে? কিবু বললেন, ‘‘শেষ আটে জামশেদপুর এফসি-র পরে সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয়— আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ছেলেদের উপরে আমার বিশ্বাস রয়েছে। ট্রফি জেতাই একমাত্র লক্ষ্য।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)